স্বপ্নের রঙ নীল। - দীপ্তাশিস দাশগুপ্ত। - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

স্বপ্নের রঙ নীল। - দীপ্তাশিস দাশগুপ্ত।

Share This
কাতার - ০
ভারত - ০

পোয়েটিক জাস্টিস বলে বোধহয় একেই।

সালটা ২০১৩ ।

তখন ইস্টবেঙ্গলের কোচ ট্রেভর জেমস মরগ্যান।

ভালো উচ্চতা, অনুমানক্ষমতা এবং আউটিংয়ের জন্যে নিয়মিত ইস্টবেঙ্গল দলের প্রথম একাদশে রাখতেন এখনকার ভারতীয় দলের গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক গুরপ্রীত সিংহ সাঁন্ধুকে। মাঝে মাঝে কিছু অমার্জনীয় ভুল করে ফেলা স্বত্ত্বেও। কিন্তু কলকাতা ময়দানের বিভিন্ন প্রাক্তন খেলোয়াড় থেকে লাল হলুদের বহু সদস্য সমর্থক সেই সময় নানান রকম বিশেষণে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। এবং বেশিরভাগের মতেই গুরপ্রীত ছিলেন এক অতি সাধারণ এবং অযোগ্য গোলরক্ষক। যার নাকি কোনো বড় দলের জার্সি পড়ার যোগ্যতাই নেই।

তা কলকাতা ময়দানের বিশেষজ্ঞদের ভাষায় সেই 'অযোগ্য' ও 'অপদার্থ' গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু ভারত অধিনায়কের আর্মব‍্যান্ড পরে সদ্য ২০১৯ এশিয়া কাপ চ‍্যাম্পিয়ন কাতারের বিরুদ্ধে রুখলেন সাতাশটি শট! নিশ্চিত গোল বাঁচালেন অন্তত দশ দশবার! কাতারের আক্রমণভাগ কতটা শক্তিশালী সেই প্রসঙ্গে একটা তথ্য দেওয়া যাক। ভারতের সঙ্গে ম‍্যাচটা ধরলে এইবছর কাতার এখনো পর্যন্ত ম‍্যাচ খেলেছে তেরোটি। এবং ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়া বাদে ভারত ই একমাত্র দল যাদের বিরুদ্ধে কাতার কোনো গোল করতে পারেনি। র‍্যাঙ্কিংএ তেতাল্লিশ ধাপ এগিয়ে থাকা এশিয়ান কাপ চ‍্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে এই ড্র যে এক বিশাল জয়ের সমান, তা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।

শুধু কি গুরপ্রীত! ভারতের এই দলের প্রথম একাদশের অনেক খেলোয়াড় ই কোনো না কোনো সময় ট্রেভর মরগ‍্যানের কোচিংয়ে খেলেছেন। সন্দেশ ঝিঙ্গান থেকে শুরু করে রাওলিন বর্জেস, কিংবা রাহুল ভেকে বা নিখিল পূজারী। বিশেষত নিখিলের কথা এখানে উল্লেখ করতেই হয়। ট্রেভর মরগ্যান যখন দ্বিতীয়বার ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে আসেন, তখন একটা সময় রোমিও ফার্নান্ডেজ ও জ‍্যাকিচাঁন্দ সিংহের মতন তারকাদের বসিয়ে তাঁকে খেলান।  যার জন্য একটা সময় মরগ্যানকে 'গো ব‍্যাক' ধ্বনিও শুনতে হয়েছে ময়দানি বিশেষজ্ঞদের কাছে। সেই নিখিল আজ কি অসাধারণ লড়াই টাই না করলেন। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, নিজের দুশো শতাংশ উজাড় করে দিলেন।

এবং ইগর স্টিমাচ!

একটা সময় ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। ১৯৯৮এ ফ্রান্স বিশ্বকাপে আবির্ভাবেই ক্রোয়েশিয়াকে তৃতীয় স্থান অর্জন করানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। সেই তিনি, ভারতের মাটিতে পা দিয়ে একটা কথাই বলেছিলেন, যে র‍্যাঙ্কিংএ নিচে থাকা দলের বিরুদ্ধে খেলে জেতার চাইতে র‍্যাঙ্কিংএ অনেক উপরে থাকা দলের সাথে খেলে ড্র করলেও অনেক কিছু শেখা যায়। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলার আগের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সমস্ত খেলোয়াড়দের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিয়েছেন। যাতে তাদের ম‍্যাচ ফিটনেসে খামতি না থাকে। এবং নানান পরীক্ষা নিরীক্ষাও করেছেন। যার দরুন একটা সময়ে সমালোচনার মুখে ও পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

আর তার প্রতিফলন ই দেখা গেল কাতারের বিরুদ্ধে। কি অবিশ্বাস‍্য লড়াইয়ের নমুনা ই না দেখালেন ভারতীয়রা। কোন ব‍্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে নয়, সম্পূর্ণ দল হিসাবে খেলে কাতারের ঘরের মাঠে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল ভারত। গোলের নিচে গুরপ্রীত ছাড়াও সন্দেশ ঝিঙ্গান, আদিল খান, রাহুল ভেকে, সাহিল, অনিরুদ্ধ থাপারাও দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিলেন। দাঁতে দাঁত প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে  সংগ্ৰাম করে গেলেন। বুঝিয়ে দিলেন, হ‍্যাঁ, ভারতীয়রাও পারে।

এবং আবার ও সেই কথা টাই বলতে হচ্ছে, হয়তো এদিন ভারত জেতেনি, কিন্তু প্রবল শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে এই ড্র কোন জয়ের থেকে কিছু কম নয়, তাও আবার বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে এই ড্র ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক পথনির্দেশিকা হয়ে থাকবে না?

ঘুমন্ত দৈত্য কিন্তু জাগছে!

এবং সাথে সাথে জাল বুনছে একশো তিরিশ কোটির স্বপ্ন। যার রঙ নীল।

কে বলে স্বপ্নের কোনো রঙ হয় না!

No comments:

Post a Comment

Pages