জর্জ টেলিগ্রাফ - ১
ইস্টবেঙ্গল - ০
২০১৪-১৫ এ শেষবার। কোচ ছিলেন আরমান্দ কোলাসো। সে বার প্রতিপক্ষ ছিল মহমেডান। আর এবার জর্জ টেলিগ্রাফ।
পাঁচ বছর পর আবার কলকাতা লীগের প্রথম খেলাতে পরাজিত হল ইস্টবেঙ্গল। সেইসঙ্গে এটাও দূরবীন দিয়ে খোঁজার মতন বিষয়, যে শেষ কবে কলকাতার দুই বড় দল, ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান একই সাথে তাদের প্রথম খেলাতেই হেরে কলকাতা লীগ অভিযান শুরু করেছে।
গোটা ম্যাচ দাপিয়ে খেলে শেষ মুহূর্তে প্রতি আক্রমণে গোল খেয়ে হারতে হলে হতাশা আসাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, ম্যাচ হেরেও সেরকম কাউকে পাওয়া গেল না, যে কিনা কোচ কিংবা খেলোয়াড়দের গালমন্দ করছেন।
হ্যাঁ, এটাই ইস্টবেঙ্গল। আরও পরিষ্কার করে বললে, বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল। চিরাচরিত ময়দানি সংস্কৃতি থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসা লাল হলুদ শিবির। যেখানে আধুনিকতা আছে, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনের কথা ভেবে যেখানে কোচ জুনিয়র ও নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেন। সিনিয়রদের তরতাজা রাখেন দেশের প্রথম সারির প্রতিযোগিতার জন্য। ঠিক যেমনটা বিশ্ব ফুটবলের বিখ্যাত ক্লাব দল গুলোতে হয়ে থাকে। আর সমর্থকরাও সেটা বুঝতে পারছেন। সব পরিস্থিতিতে দলকে সমর্থন করছেন।
বিগত বছরগুলিতে কি দেখা গেছে? সব ম্যাচ জিততে হবে, সব ট্রফি জিততে হবে, এই অজুহাতে প্রতি ম্যাচে খেলত দলের সিনিয়র এবং নিয়মিত খেলোয়াড়রা। ফলে কি হত , সারা বছর ধরে শুধু তারাই খেলে যেতেন। অতিরিক্ত খেলার ফলে মরশুমের মাঝপথেই চোট লাগত। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলাতে তাঁদের পাওয়া যেত না। জুনিয়র এবং অনিয়মিতরা সারা বছর প্রায় বসেই থাকতেন। ফলে সুযোগের অভাবে একরকম হারিয়েই যেতেন তাঁরা। অথবা বিরক্ত হয়ে পরের বছর চলে যেতেন অন্য ক্লাবে। যার দরুন শক্তিশালী রিসার্ভ বেঞ্চ বলতে যা বোঝায় তা কখনই তৈরি হতো না।এই কারণে কোন নিয়মিত খেলোয়াড় চোট পেলে বা জাতীয় দলে সুযোগ পেলে তাঁর বিকল্প থাকতো না দরকারের সময়।
যে রোগ টা শুরুতেই ধরেছেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্র। তাই জন্য এই বছর শুরুতেই বলে দিয়েছেন যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য আই লীগ, সুপার কাপ ও এএফসি কাপ। তাই তিনি সেই লক্ষ্যে নতুন খেলোয়াড়দের তৈরি করতে চান। আর ঠিক এই কারণেই ডুরানড কাপ ও কলকাতা লীগে জুনিয়র ও অনিয়মিত দের খেলাচ্ছেন। এতে লাভ হচ্ছে দুটো। ভবিষ্যতের জন্য জুনিয়রদের তৈরি করা তো হচ্ছেই। একই সাথে শক্তিশালী রিসার্ভ বেঞ্চ ও তৈরি হচ্ছে। উপরন্তু, দলের সমস্ত খেলোয়াড় নিয়মিত মাঠে নামার সুযোগ ও পাচ্ছে।
তাই আজকে শেষ মুহূর্তে জাসটিস মরগ্যান গোল করে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আনন্দ মাটি করে দিলেও, লাল হলুদ শিবির কাছে এই হার নিমিত্ত মাত্র। কারণ আজকের অভিজিৎ সরকার, বিকাশ, শুভনীল, মেহতাব সিংহ, টোনডম্বা, বিদ্যাসাগর, রোনাল্ডো দের মত জুনিয়র ও অনিয়মিতদের নিয়ে গড়া দল যে আগামী দিনে আরও বড় কিছু লক্ষ্য পূরণ করবার দিকে এগোচ্ছে। এবং কে না জানে বড় কিছু পেতে হলে, অনেক ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। হয়ত আজকে খেলা এই জুনিয়রদের মধ্যে থেকেই আগামী দিনে বেরিয়ে আসবে কোন নতুন তারকা, যার হাত ধরে শতবর্ষের মশাল বহুদিন স্বমহিমায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকবে।

No comments:
Post a Comment