বাকি মরশুমের জন্য ইস্ট বেঙ্গলের কোচ মৃদুল ব্যানার্জি | বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বাকি মরশুমের জন্য ইস্ট বেঙ্গলের কোচ মৃদুল ব্যানার্জি | বর্তমান

Share This

কোচকে পরামর্শ দেবেন তিন প্রাক্তনী


আবার কলকাতা ফুটবল বাঙালি কোচের দখলে। মোহন বাগানে সফল কোচ সঞ্জয় সেন। আর ইস্ট বেঙ্গলে ট্রেভর জেমস মরগ্যান ইস্তফা দেওয়ার পরদিনই সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের কোচ মৃদুল ব্যানার্জিকে ইস্ট বেঙ্গলের ‘হটসিট’এ বসানো হল। বুধবার এই বাঙালি কোচ ফুটবলারদের নিয়ে অনুশীলনে নামছেন। এক অর্থে ময়দানে রেকর্ড করে ফেললেন মৃদুল। একই মরশুমে মহমেডান স্পোর্টিং, বাংলা দল এবং ইস্ট বেঙ্গলের কোচ হওয়ার নজির মৃদুল ছাড়া অতীতে আর কারও নেই। 

বিদায়ী কোচ মরগ্যানের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বুধবার বা বৃহস্পতিবার রাতে। মঙ্গলবার সকালে দলকে অনুশীলন করালেন ইস্ট বেঙ্গলের একদা জাতীয় লিগ জয়ী কোচ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁকে সাহায্য করলেন লাল-হলুদের ঘরের ছেলে ভাস্কর গাঙ্গুলি ও তুষার রক্ষিত। বুধবার সকাল থেকে অবশ্য এই চিত্র বদলে যাবে। চিফ কোচ হিসেবে কাজ শুরু করবেন মৃদুল ব্যানার্জি। আর ইস্ট বেঙ্গলের অ্যাডভাইজারি কমিটিতে চলে যাবেন ইস্ট বেঙ্গলের তিন প্রাক্তনী ভাস্কর-মনা-তুষার। 
ক্লাবের সহ সচিব ডাঃ শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘এবার থেকে এই অ্যাডভাইজারি কমিটি চিফ কোচ ও ক্লাবের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে। আপাতত ফেডারেশন কাপ পর্যন্ত মৃদুলই কোচ থাকবে। তারপর তাঁর পারফরম্যান্স রিভিউ করে এই অ্যাডভাইজারি কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এই কমিটির সদস্যরা মৃদুলকে কোচ হিসেবে বাছাই করেছে।’ 
মঙ্গলবার অনুশীলনের শেষ দিকে ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে আসেন মৃদুল ব্যানার্জি। কর্তা ও ফুটবলারদের সঙ্গে মিলিত হন। প্র্যাকটিস শুরুর আগে প্রায় এক ঘন্টা তাঁবুর ভেতরে ফুটবলারদের আলাদা ক্লাস নেন ইস্ট বেঙ্গলের তিন প্রাক্তন ফুটবলার। প্র্যাকটিসের পর মৃদুলের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসেন ক্লাবের শীর্ষ কর্তাসহ অ্যাডভাইজারি কমিটি। 
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মৃদুলের সঙ্গে হাজির ছিলেন দুই প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ভাস্কর গাঙ্গুলি। ফুটবল জীবনেও এই দুই ফুটবলার খুবই ‘ডাকাবুকো’ বলে পরিচিত ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গলের দুর্দিনে এই দুই প্রাক্তনের পরামর্শের উপর ক্লাবকর্তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। যেখানে এদিন অনুশীলনে ফুটবলারদের প্রতিমুহূর্তে তাতালেন ভাস্কর-মনা। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা দু’জনেরই নিত্যসঙ্গী। তুলনায় ফিট মনোরঞ্জন হাঁটুর সমস্যায় খোঁড়াতে খোঁড়াতেই ফুটবলারদের অনুশীলনে নির্দেশ দিলেন। আর স্থুলকায়, হাঁটুর সমস্যা থাকা, পারকিনসন্স রোগে আক্রাম্ত ভাস্কর অদম্য মনের জোরে রেহনেশ, শুভাশিসদের উইথ দ্য বল কিপিং প্র্যাকটিস করালেন। ভাস্করের কাছে প্র্যাকটিস করে রেহনেশদের প্রায় জিভ বের হওয়ার অবস্থা!
আপনারাও কি এবার থেকে নিয়মিত মাঠে নামবেন? মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, ‘আমি নিজেকে ফিট রাখতে এখনও সারা বছর মাঠে নামি। মৃদুল প্রয়োজন করলে মাঠে নামতে কোনও সমস্যা নেই।’ 
মৃদুলকে কোচ করার নেপথ্যে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বড় ভূমিকা নিয়েছেন। এদিন সাত ও আটের দশকে ভারতের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার বললেন, ‘আমার ও ভাস্করের সঙ্গে অনেকদিন থেকেই মৃদুলের ভালো সম্পর্ক। মৃদুলকে কোচ করা হল মূলত তিনটি কারণে। এক, ওঁর ‘এ’ লাইসেন্স আছে। দুই, ক্লাব এবার থেকে মোটামুটি ঠিক করেছে ভারতীয় বা বাঙালি কোচ রাখবে। তিন, মৃদুলের কলকাতা ফুটবলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেকদিন পর সন্তোষ ট্রফিতে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করেছে মৃদুল। ইস্ট বেঙ্গলে একদা আমার সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছে। কোনও ইগো প্রবলেম নেই ওর। তাই ওকে সুযোগ দেওয়া হল।’
দুই প্রধানের মধ্যে এই প্রথম কোনও বড় ক্লাবে পূর্ণ কোচের দায়িত্ব পেয়ে তা কাজে লাগাতে মরিয়া পাইকপাড়ার বাসিন্দা মৃদুল ব্যানার্জি। তাঁর ফুটবল জীবন চোট পেয়ে অকালে শেষ হয়ে যায়। সেই আক্ষেপ তিনি কোচ হিসেবে মেটাতে ময়দানে অদম্য লড়াই করে চলেছেন অনেকদিন ধরে। লক্ষ্য, কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। এখন প্রশ্ন, বড় ক্লাবে তারকাদের সামলানোর জন্য ম্যান ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা মৃদুলের কি রয়েছে? এই প্রশ্নে বাঙালি কোচ বললেন, ‘বড় ক্লাবে তারকা ফুটবলার বেশি। কিন্তু ছোট-বড় সব ক্লাবেই অল্পবিস্তর ম্যান ম্যানেজমেন্ট লাগে। আমি ভালো কিছু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। আমার আপাতত লক্ষ্য, আই লিগের শেষ দুটি ম্যাচ জিতে সম্মানজনকভাবে প্রতিযোগিতা শেষ করা। তারপর ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’ 
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিদায়ী কোচ মরগ্যান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেউই বিতর্ক বাড়াতে চাননি। মনোরঞ্জন স্পষ্ট বললেন, ‘আমি পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না। তাহলে অনেক ফুটবলারকে দায়ী করতে হয়। আমি সেই প্রসঙ্গে যেতে চাই না। আমি সামনের দিকে তাকাতে চাই। ইস্ট বেঙ্গলের ভালো কিছু করার জন্য আমি সবসময় রয়েছি। মরশুম শেষ হতে আর দেড় মাস রয়েছে। মৃদুলকে সময় দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মিডিয়া মৃদুলের পাশে থাকুন। দলটা মানসিকভাবে খুব খারাপ জায়গায় রয়েছে।’ ইস্ট বেঙ্গলের নয়া কোচ অবশ্য পরোক্ষে ব্রিটিশ কোচকে কটাক্ষ করলেন। তিনি বলেন, ‘আগের কোচের কিছু টেকনিক্যাল ভুল ছিল। আমি সেটা প্র্যাকটিসে ও ম্যাচে ঠিক করার চেষ্টা করব। তবে এবার যা ইস্ট বেঙ্গলের দল ছিল তাতে দলটার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রসদ ছিল।’
এদিন অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন ‘বিতর্কিত’ গোলরক্ষক রেহনেশ ও ডার্বিতে লাল কার্ড দেখা উইলিস প্লাজা। রেহনেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভাস্কর। তিনি বলেন, ‘আমি ওকে উৎসাহিত করেছি। আমি যখন একদা ১৯৭৫ সালে শিল্ড ফাইনালের বড় ম্যাচে পাঁচটির মধ্যে চার গোল খেয়েছিলাম, তখন ক্লাব ও সতীর্থরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। রেহনেশেরও পাশে থাকতে হবে। ও ঘুরে দাঁড়াবেই।’ দলের সিনিয়র ফুটবলার মেহতাব হোসেন বলছেন, ‘অনূর্ধ্ব ২১ বাংলার দল ও আগে এই ইস্ট বেঙ্গলেই মৃদুলদার কোচিং পেয়েছি। ওর ম্যান ম্যানেজমেন্ট ভালো। আমার জীবনে আর আই লিগ হল না, এটাই দুঃখের। তবে সবাই মিলে চেষ্টা করে দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

No comments:

Post a Comment

Pages