রিয়াল মাদ্রিদ ২ (রোনাল্ডো ২) বায়ার্ন মিউনিখ ১ (ভিদাল)
মিউনিখ, ১৩ই এপ্রিল — মুঠো এখনও শক্ত। আরও দৃঢ় পায়ে এগচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। নজিরে নজর জিনেদিন জিদানের। টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। তা অবশ্য নজির নয়। এবার তৃতীয়বারের দিকে ক্রমশ এগচ্ছে রিয়াল। যদিও সবে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্ব জিতেছে। তাও যে আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে, তাতে বায়ার্ন মিউনিখের মতো ছন্দে থাকা দলও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
রিয়ালের এই কর্তৃত্বের কৃতিত্ব যদি কারো হয়ে থাকে, তাহলে সেই কৃতিত্ব একজনেরই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এগারো ঘণ্টা শূন্য ছিলেন রোনাল্ডো। আলিয়াঞ্জ এরিনায় সেই খরা কাটালেন। শুধু গোলে ফিরলেনই না চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বাধিক একশো গোলের নজিরও গড়লেন। প্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি এখনও ৯৭ গোলেই আটকে রয়েছেন। কিন্তু রোনাল্ডো সকলকে ছাপিয়ে, সবথেকে বেশি গোল করলেন। ইউরোপীয় ফুটবলে গোলের সেঞ্চুরি গড়লেন।
এই কাজ খুব সহজ ছিল না। অন্তত প্রথমার্ধ। রবার্ট লেবানডৌস্কি ও ম্যাট হামেলসকে চোটের জন্য খেলাতে পারেননি কার্লো অ্যান্সেলোত্তি। তবুও শুরুতে চাপেই ছিল রিয়াল। গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু গোল করতে পারেনি। বরং সার্জিও রামোস, নাচোদের রক্ষণ ভেঙে গোল করেছেন আর্তুরো ভিদাল। ২৫ মিনিটে থিয়াগো আলাকান্ত্রার কর্নার থেকে ভিদালের হেড। রিয়ালের গোলরক্ষক কেলর নাভাস হাত ছুঁইয়েও বাঁচাতে পারেননি। শুরু থেকে চাপ রাখার চেষ্টা করে, এক সময় সফলও হয়ে যায়। প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়ে রিবেরির শট দানি কার্ভাহালের কাঁধে লাগে। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দিয়ে বসেন। রেফারি ভুল করলেও, তার সুযোগ নিতে পারেনি ঘরের দল। ভিদালের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, পেনাল্টি শট গ্যালারিতে উড়িয়ে দেন। জয়ের সম্ভাবনাও বোধ হয় সেখানেই মাঠ ছাড়ে।
প্রথমার্ধ যদি বায়ার্নের হয়ে থাকে, দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই রিয়ালের। খেলার দুই অর্ধে দুটি দলের আকাশ পাতাল পার্থক্য। এবার রিয়ালের পালা। ঘরের মাঠে টানা ষোলো ম্যাচ অপরাজিত ছিল অ্যান্সেলোত্তির দল। সেই নজির ভাঙলেন রোনাল্ডোরা। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর দুই মিনিটের মাথায় গোল। চককিতে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল বায়ার্নের বক্সে। কার্ভাহালের ক্রস থেকে বোয়েতাঙ-ফিলিপ লামদের মধ্যে থেকে পায়ের জাদুকরী স্পর্শে গোল করেন। সমতা ফেরে। রোনাল্ডোর এই গোলই অক্সিজেন জোগায় রিয়ালের। কিন্তু বায়ার্নকে সত্যি ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় জাভি মার্টিনেজের জোড়া হলুদ কার্ড। ৬১ মিনিটে দশজনে পরিণত হয় বায়ার্ন। নিজেদের ঘরের মাঠে এভাবে পিছিয়ে পড়লে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে যায়। দশজনের বায়ার্নকে পেয়ে ছেলে খেলা করতে কোনো কসুর করেনি। প্রায় ৩২মিনিট দশ জনে খেললেও ম্যানুয়েল ন্যুয়ের গ্লাভসে প্রতিহত হয় রিয়ালের সব জারিজুরি। তবুও রোনাল্ডোর পায়েই ন্যুয়ের পরাস্ত হন। মার্কো আসেনসিও থেকে পাওয়া বল থেকে ন্যুয়েরের দু’পায়ের ফাঁক গলে গোল করেন তিনি। ৭৭ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। একটানা চাপ রেখে গেলেও সুইপার কিপার রুখে দেন। নজিরের আনন্দে তাই উৎফুল্ল হলেও, তৃতীয় গোল না পাওয়ার আফসোস করেছেন ড্রেসিং রুমে। কোচ জিদানই তা জানিয়েছেন, ‘ড্রেসিং রুমে খুশিই দেখেছি। কিন্তু পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি। কারণ তৃতীয় গোল করতে পারেনি।’
রোনাল্ডো নিজের মুখে যদিও জানিয়েছেন, ‘আমি এই রেকর্ড করতে চাইছিলাম। এই ধরনের একটি মাইলস্টোন গড়তে পেরে আমি গর্বিত, আর বায়ার্নের মতো দলের বিরুদ্ধে করে আরও বেশি ভালো লাগছে।’ তবে এখানেই হাল ছাড়ছেন না ম্যানুয়েল ন্যুয়ের। আত্মবিশ্বাসী সুরে জানিয়েছোন, ‘এখনও বিশ্বাস করি আমরা পারবো। প্রথমার্ধে আমরাই ভালো ছিলাম।’

No comments:
Post a Comment