মোহন বাগান সম্পর্কে সোজা সাপটা ঘরের ছেলে প্রসুন ব্যানার্জি - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

মোহন বাগান সম্পর্কে সোজা সাপটা ঘরের ছেলে প্রসুন ব্যানার্জি

Share This


দেবাশিস দত্ত: মহা ডামাডোল বললে কম বলা হয়। মোহনবাগান–অন্ত–প্রাণ যেসব সমর্থক, গোটা বাংলা তথা ভারতে ছড়িয়ে আছেন, তঁারাও চাইছেন এই অচলাবস্থা কেটে যাক দ্রুত। কিন্তু, এই সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শৈলেন মান্না নেই, বেঁচে থাকলে তিনি যে এ সব দেখেশুনে কষ্ট পেতেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা নিশ্চিত, তিনি এই ২০১৮ সালে বেঁচে থাকলে, যুযুধান দুই গোষ্ঠীর কাছে বার বার দৌড়ে গিয়ে কোনও একটা সমাধান সূত্র নিশ্চয়ই বের করতেন। আপাদমস্তক মোহনবাগানি হিসেবে চিহ্নিত সুব্রত ভট্টাচার্য আপাতত ফোর্থ রেফারির ভূমিকায় আছেন। নজর রাখছেন ঘটনার গতিবিধির ওপর। কিছু বলতে চাইছেন না। তবে, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রবল ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও প্রসূন ব্যানার্জি রবিবার সন্ধেয় জানিয়ে দিলেন, ‘‌কষ্ট পাচ্ছি। মোহনবাগান না থাকলে আমি প্রসূন ব্যানার্জি হতাম না। কিন্তু যা চলছে, তা বন্ধ হওয়া দরকার। আমি নিজে থেকে এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করার জন্য ঝঁাপিয়ে পড়ছি না। তবে, আমাকে যদি ডাকা হয়, হাজার ব্যস্ততা সত্ত্বেও যাব। এই মুহূর্তে মোহনবাগানে নেতাগিরি করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই।’‌

প্রসূন মনে করছেন, টুটু বসু সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, ‘‌কেন বলছি জানেন?‌ টুটু বসুর একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। অঞ্জন মিত্রকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন, শরীর খারাপ, এখন নতুন প্রজন্মদের হাতে ক্লাব তুলে দেওয়ার কথা ভাবা উচিত। আমি তো বলব, সৃঞ্জয়, দেবাশিসের সঙ্গে চাইলে অঞ্জন–কন্যাকেও কমিটিতে নিয়ে নেওয়া হোক। তা হলে অন্তত অঞ্জনদা বুঝতে পারবেন, তঁার পরিবারেরও প্রতিনিধিত্ব থাকছে মোহনবাগানে।’‌ প্রসূন আবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন, ‘‌যা শুনছি, যা পড়ছি, তাতে খঁাটি মোহনবাগানি হিসেবে লজ্জা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ঝড় উঠছে মোহনবাগানকে নিয়ে, তা দেখে–শুনে ভাল লাগছে যে, এখনও পর্যন্ত আমাদের সমর্থকরা সত্যিই মোহনবাগান বলতে অজ্ঞান। তঁারাও চাইছেন, দ্রুত এই জটিল পরিস্থিতি কেটে যাক। আমাকে মানস ভট্টাচার্য ফোন করে এই বিতর্কে নাক গলানোর অনুরোধ করেছে গতকাল। আমি মানসকেও বলে দিয়েছি, মোহনবাগানের ভাল হোক। কিন্তু যেচে আমি যাব না। এই বয়সে অপমানিত হতে নারাজ। যদি দুম করে কেউ বলে বসেন, তুমি কেন বলছ?‌ আরও বেশি কষ্ট পাব। নিজের সম্মান তো নিজেকেই বঁাচাতে হয়!‌ তাই, বুক ভেঙে গেলেও এই পরিস্থিতিতে নিজেকে গুটিয়ে রাখছি। মানস কিন্তু আমার এই যুক্তিটা মেনে নিয়েছে।’‌

পরক্ষণেই প্রসূন যোগ করলেন, ‘‌স্বীকার করতেই হবে, সত্যজিৎ চ্যাটার্জিকে অপমান করা হয়েছে। এ সব তো মোহনবাগানের সংস্কৃতি নয়!‌ আমাদের আমলে বাবলু বনাম গৌতম সরকার কত ঝগড়াঝঁাটি হয়েছে। কিন্তু মাঠে খেলতে নামার সময় সবাই এক সঙ্গে লড়াই করেছে। এটাই তো স্পোর্টসম্যান স্পিরিট। আমি নিশ্চিত, কর্তারা মোহনবাগানের সম্মানের কথা ভেবে এক ছাতার তলায় থাকার চেষ্টা করবেন। এখনও মোহনবাগান হেরে গেলে আমার মন খারাপ হয়। যেমন জিতলে হয় আনন্দ। এই প্রজন্ম কি জানে মোহনবাগান ক্লাবের গর্বের কথা?‌ আমি তো বরাবরই মোহনবাগান মানে মায়ের অঁাচলের আড়ালে থাকার কথা বলে এসেছি। এখনও আছি। চিরকাল এই মানসিকতা নিয়েই বড় হয়েছি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত খঁাটি মোহনবাগানি হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে চাইব। পরে কী হবে জানি না, আমি চাই আমার মোহনবাগান যেন এমন ঐতিহ্য নিয়েই বেঁচে থাকে। মৃত্যুর আগে এর অন্যথা ঘটুক, চাই না। চাইবও না। এই মুহূর্তে আশা করছি, প্রার্থনা করছি, টুটু বসু যেন বুঝিয়ে–সুজিয়ে একটা সমাধান সূত্র বের করে দিতে পারেন। পারলে টুটু বসুই পারবেন। মোহনবাগানের জন্য তঁার অবদান কম নয়। ২৮–২৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন যিনি, তঁার মোহনবাগান–প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত। আমি খুবই আশাবাদী, খুব শিগগিরই সবুজ–মেরুন শিবিরে অচলাবস্থা কাটবে। স্বাভাবিক হয়ে আসবে পরিস্থিতি। সামনে অনেক কাজ। নতুন করে দলকে সাজাতে হবে। আমি দু’‌পক্ষকেই অনুরোধ করছি, অবিলম্বে নিজেদের ইগো বিসর্জন দিয়ে ক্লাবের কথা ভাবার জন্য।’‌‌‌

No comments:

Post a Comment

Pages