বিশ্বকাপ ফুটবল : তারকা পরিচয় - জাস্ট ফন্টেইন | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বিশ্বকাপ ফুটবল : তারকা পরিচয় - জাস্ট ফন্টেইন | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত

Share This



বিশ্বকাপের দামামা বেজে গেছে। এখন শুধুই প্রহর গোনার পালা। আজ আমরা এমন একজনের সাথে পরিচয় করবো যিনি জীবনের প্রচুর বাধা বিপত্তি কে তুচ্ছ করে বিশ্বকাপের মতন বৃহত্তর মঞ্চে দেশের হয়ে নিজের প্রতিভার অনন্য স্বাক্ষর রেখেছিলেন। একটি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশী গোল করার রেকর্ড টি আজ তাঁর নামের পাশে জ্বল জ্বল করছে। তিনি Just Fontaine। জন্ম ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই অগাস্ট Marrakech এ, তখনকার French Morocco হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাবা ছিলেন ফরাসী ও মা ছিলেন স্প্যানিশ।তাঁর জন্মের পর তাঁর পরিবার Casablanca তে বসবাস আরম্ভ করেন যেখানে তিনি USM Casablanca তে তাঁর ফুটবল জীবন আরম্ভ করেন। 



তখন অপেশাদার ফুটবলার হিসেবেই খেলতেন এবং ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেখানে খেলেন। শুরু থেকেই ছিল ফরওয়ার্ডে খেলার ঝোঁক। গোল করার ক্ষেত্রে তাঁর পারদর্শিতা তখন থেকেই ছিল দেখার মতন। যার দরুন অন্যদের চেয়ে অনেক বেশী ও অনেক সহজে গোল করতে পারতেন তিনি। এরপর তিনি চলে যান Nice এ যে ক্লাবের হয়ে তিন মরশুমে ৪৪ টি গোল করেন তিনি। সেই তাঁর উত্থানের শুরু। এরপর তিনি Raymond Kopa র হয়ে ৬টি মরশুম খেলেন এবং ১২৫ টি গোল করেন। তিনি যে কত দক্ষ একজন ফরওয়ার্ড ছিলেন এই সকল তথ্যই তাঁর প্রমাণ। এছাড়াও ফরাসী জাতীয় দলের হয়ে তিনি মাত্র ২১ টি খেলায় ৩০টি গোল করেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে মাত্র ৬ টি খেলায় ১৩ টি গোল। ভাগ্য সহায় হলে তাঁর গোলসংখ্যা আরও বাড়তে পারত। সেমিফাইনালে তাঁর দু দুটি অসাধারণ শট বারে লাগে, এবং তিনি দুর্দান্ত খেলা স্বত্তেও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাঁর দেশ ফ্রান্স পরাজিত হয়। যার দরুন সেই বিশ্বকাপে তিনি সোনার বুট পান। 



১৯৫৮ বিশ্বকাপে মূলত তাঁর অসাধারণ গোল করার দক্ষতার জোরেই ফ্রান্স তৃতীয় স্থান লাভ করে। দুঃখের ব্যপার, এই বিশ্বকাপে খেলার সময় তাঁর নিজের একজোড়া বুট পর্যন্ত ছিল না। তিনি তাঁর একজন সতীর্থের বুট পরে খেলেন। এত প্রতিকূলতা স্বত্তেও সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে প্রতিটি খেলাতে গোল করেন, এবং পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে তৃতীয় স্থান দখলের খেলাতে তিনি হ্যাট্রিক সহ ৪ গোল করেন।তাঁর দুর্ভাগ্য, ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে পায়ে দুরুহ চোট লাগার কারণে মাত্র ২৮ বছর বয়েসেই তাঁর ফুটবল কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। নাহলে হয়ত বল পায়ে তিনি আরও নজির গড়তে পারতেন। কিন্তু এই স্বল্প সময়েও যা করে গেছেন তাই বা কম কি? একটি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশী গোল করার রেকর্ড তো আছেই, এছাড়াও বিশ্বের সমস্ত ফরওয়ার্ড দের মধ্যে দেশের হয়ে সবচেয়ে ভাল ম্যাচ পিছু গোলের গড়ও (১.৪৩) তাঁর। রেকর্ড গড়া হয় ভাঙার জন্যই। কিন্তু তাঁর এক বিশ্বকাপ এ ১৩ গোলের রেকর্ড কবে ভাঙবে, বা কে ভাঙবেন, তা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। কারণ আধুনিক ফুটবল যেভাবে খেলা হয়, তাতে স্বচ্ছন্দে বলা যায়, এই রেকর্ড আরও বহুদিন অক্ষত থাকবে। 



তাঁর মতন বিরল প্রজাতির ফরওয়ার্ড এখন পর্যন্ত খুব কম ই জন্মেছেন। তাঁর ওপর যে সময় তিনি এই বিশ্বরেকর্ড গড়েন, সেইসময় আজকের দিনের মতন ফুটবলের আইনও ফরওয়ার্ড দের জন্য এত অনুকূল ছিল না। থাকলে তাঁর মতন খেলোয়াড় যে কি করতেন বা করতে পারতেন তা আজ ও চর্চার বিষয়। সুতরাং বলাই যেতে পারে, তাঁর এই কৃতিত্ব ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে। ফুটবল সম্রাট পেলে তাঁকে ১২৫ জন জীবন্ত ফুটবল কিংবদন্তি দের একজন বলে চিহ্নিত করেছেন ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে। এছাড়াও ফরাসী ফুটবল ফেডারেশন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে শেষ ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ ফরাসী ফুটবলার বলে বিবেচিত করেছে।

No comments:

Post a Comment

Pages