সঞ্জয়ের রিজার্ভ বেঞ্চও শক্তিশালী - সৌমিত্র কুমার রায় | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

সঞ্জয়ের রিজার্ভ বেঞ্চও শক্তিশালী - সৌমিত্র কুমার রায় | আজকাল

Share This
মাজিয়া ১ (‌মহম্মদ উমের)‌
মোহনবাগান ০


বৃষ্টিভেজা সরোবরে দু’‌নৌকায় পা দিয়ে চলতে গিয়েই ডুবল সবুজ–মেরুন তরী।
সামনে মাজিয়া স্পোর্টস, কিন্তু বাগান দেখছিল আইজলকে। এরকম দু’‌নৌকায় পা দিয়ে চলা কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়। বুধবার রাতে ঠিক তেমনই অবস্থা হল মোহনবাগানের। এএফসি কাপের মূলপর্বে গ্রুপ ই–র ম্যাচে মালদ্বীপের মাজিয়ার কাছে ১–০ ব্যবধানে হেরে গেল মোহনবাগান। তবে এই হারে ২২ এপ্রিল আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ আইজল ম্যাচের আগে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন আইজল ম্যাচের আগে জয়ের ধারা বজায় রাখতে। যাতে দলের ছন্দপতন না হয়। ফুটবলারদের মনোবলে চিড় না ধরে। যতই রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা খেলুক না কেন, হারটা হারই।

বুধবার মোহনবাগানের প্রথম একাদশ বিদেশি–হীন। একঝাঁক ফুটবলার বাইরে। তবু গোটা প্রথমার্ধ দেখে তা বোঝাই গেল না। মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছিল, মোহনবাগানের প্রথম টিম না রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা খেলছেন। প্রথমার্ধে মোহনবাগান গোলকিপার শিবিনরাজের কাছে একটা বলই গিয়েছিল। আর তাতেই গোল হজম করে বসল সঞ্জয়ের দল। ওটা বাদ দিলে ভুরি ভুরি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন জেজে–বলবন্তরা। কিন্তু তা থেকে কাজের কাজ কিছু হয়নি। প্রতিআক্রমণেই প্রয়োজনীয় গোলটি তুলে নেয় মাজিয়া। ‘‌ডি’‌ বক্সের বাইরে মাজিয়ার মহম্মদ উমের একটা বল পেয়েছিলেন। তা ধরে বাগানের স্টপার কিংশুক দেবনাথকে আউটসাইড ভাঁজে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোলে রাখেন। বাগান পিছিয়ে পড়ে।
তবে বাগানের পারফরমেন্স মোটেই হারার মতো ছিল না। দুটো অর্ধ মিলিয়েই অনেক সুযোগ তৈরি করেছিল তারা। ১৩ মিনিটে বলবন্তের বাঁ পায়ের শট বারে না লাগলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত সবুজ–মেরুন ব্রিগেড। এছাড়াও ১৮ মিনিটে প্রবীরের শট এবং ৩১ মিনিটে তাঁর ক্রস থেকে হেডে গোল করতে অল্পের জন্য ব্যর্থ হন জেজে। এদিন আইজল ম্যাচের কথা মাথায় রেখে বিদেশী–সহ অনেক স্বদেশী ফুটবলারকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন মোহন–কোচ। শুরুতেই বলা হয়েছে, বাগান দেখছে আইজলকে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এদিন সকালে। ইডেন গার্ডেন্সের জিমে ফিট থাকতে শরীরচর্চায় ব্যস্ত রইলেন সনি নর্ডি, এডুয়ার্ডো, দেবজিৎ–সহ প্রথম একাদশের ফুটবলাররা। সন্ধেবেলায় শহরের কালবৈশাখী–সহ ঝড়বৃষ্টি স্বস্তি এনে দিয়েছিল শহরবাসীকে। কিন্তু সেই স্বস্তির জলে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন কি আদৌ স্বস্তিতে থাকতে পারলেন?‌ কারণ দল যে হেরেছে।
তা সত্ত্বেও আইজল ম্যাচের পরীক্ষা–নিরীক্ষা কিন্তু সেরে নিলেন তিনি। যেমন রক্ষণে রাজু, মাঝমাঠে কাৎসুমি, আজহারকে নামিয়ে দিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। তবে বিরতির পরে মাজিয়ার আক্রমণ তুলনায় বাড়ে। উল্টোদিকে, মোহনবাগান ফুটবলাররা কেমন যেন গুটিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে আই লিগ ও এএফসি কাপ— এই দোটানায় পড়ে হয়তো নিজেদের মেলে ধরতে অসুবিধা হচ্ছিল ফুটবলারদের। এই ম্যাচকে গুরুত্ব তিনি কম দিচ্ছেন সেটা ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনেই বুঝিয়েছিলেন সঞ্জয়। গোটা ম্যাচে সঞ্জয়ের পরিবর্তে সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তী রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ফুটবলারদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এদিনের রবীন্দ্র সরোবরের গ্যালারিও প্রায় ফাঁকা। গতবারের মতোই এবারও মোহনবাগান যে এএফসি কাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, এদিন সেই ছবিটা সবদিকেই স্পষ্ট ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে মিনিট দশেক আক্রমণের ঝড় তুলেছিল মাজিয়া। তার পর আবার ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেন বাগান ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধেও অন্তত গোটা তিনেক সুযোগ নষ্ট করেছে সবুজ–মেরুন। ৮৭ মিনিটে বিপক্ষের বিদেশি মিলোস কোভাচেভিচ দুটো হলুদ কার্ড দেখে বেরিয়ে যান। কিন্তু বাকি অল্প সময়ে তার সুবিধা নিতে পারেনি গঙ্গাপাড়ের দলটি। ই–গ্রুপে তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট হল মোহনবাগানের। কিন্তু মোটের ওপর বিদেশি–হীন (‌দ্বিতীয়ার্ধে কাৎসুমি বাদে)‌ মোহনবাগান কিন্তু মালদ্বীপের দলটি বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই চালিয়েছে। গতবার এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই গুয়াহাটিতে ৫–২ ব্যবধানে জিতেছিল মোহনবাগান। কিন্তু তারপর দুটো দলেই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এবং এদিন মাজিয়া যা পারফরমেন্স করে জিতেছে তাতে মোহনবাগানের প্রথম দল খেললে কী ফলাফল হত তা বলা মুশকিল।
মোহনবাগান:‌ শিবিনরাজ, শৌভিক ঘোষ (‌কাৎসুমি)‌, সার্থক (‌রাজু)‌, কিংশুক, বিক্রমজিৎ (‌জুনিয়র)‌, কিন লুইস (‌আজহার)‌, শৌভিক চক্রবর্তী, বিক্রমজিৎ (‌সিনিয়র)‌, প্রবীর, জেজে, বলবন্ত। 

No comments:

Post a Comment

Pages