ছড়ি ঘুরিয়ে হয় না, মর্গানের বোঝা উচিত ছিল - সুধীর কর্মকার | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

ছড়ি ঘুরিয়ে হয় না, মর্গানের বোঝা উচিত ছিল - সুধীর কর্মকার | আজকাল

Share This

দেওয়াল লিখনটা অনেক আগেই পড়ে ফেলেছিলেন মর্গান। তবু কেন দায়িত্ব ছাড়তে এতটা সময় নিলেন বুঝলাম না। বিদেশি, যথেষ্ট অভিজ্ঞ কোচ, দারুণ ম্যান ম্যানেজমেন্ট, তবুও কেন ক্লাবের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় মাথা গলাতে গেলেন সেটাও বুঝিনি। মর্গান সাহেবের বোঝা উচিত ছিল, ভালবাসা দিলে তবেই সেটা পাওয়া যায়। এই পর্যায়ে এসে ছড়ি ঘুরিয়ে সাফল্য আদায় করা যায় না। সেজন্যই আমাদের সময় প্রদীপদা এত সাফল্য পেয়েছেন, অথচ অমলদা অত বড় মাপের কোচ হয়েও বড় ক্লাবে সেরকম সফল হতে পারেননি।
অমলদাকে অসম্মান না করেই বলছি, শিক্ষানবিশ ফুটবলারদের েযভাবে শাসন করা যায়, বড় ক্লাবের ফুটবলারদের ওপর কিন্তু সেই দাপট খাটে না। এখানে ফুটবলারদের মানসিকতা বুঝে সামলাতে হয়। হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান হয় না, ফুটবলারদের মানসিকতাও সেরকম। প্রদীপদা সেই কৌশলটা দারুণ বুঝতেন। অমলদার কড়া কোচিংয়ে সাড়ে ন’টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়তে হত। অথচ প্রদীপদার সময় ম্যাচের আগের রাতেও তাসের আড্ডা এমনকী নাইট শো দেখতেও যেতাম। প্রদীপদা কাঁচুমাচু মুখে বারণ করলে আমরাই আশ্বস্ত করতাম, ম্যাচে সেরাটা দেব। সেই ভরসা রাখতে পারতেন বলেই প্রদীপদা সফল।
ফুটবলারদের বিরাগভাজন হয়ে ওঠার পিছনেও মর্গানের বেশ কিছু কাজকর্ম দায়ী। যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করা উচিত, তখন দুম করে ছুটি কাটাতে দেশে গেলেন। আবার ব্যর্থতার সময়ে ফুটবলারদের দোষারোপ করলেন। এটা ঠিক নয়। বড় ক্লাবে কোচিং করাতে এলে সদস্য–সমর্থকদের পাশাপাশি কর্তাদের চাপ যে থাকবে, সেটা তো আগেই জানতেন। এই জায়গাটাতেই নতুন কোচ কেমন সামলায় সেটাই দেখার। মৃদুলের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। একজন বাঙালি কোচ ভাল করলে বাঙালি হিসেবে গর্ব বোধ করি। এই যেমন সঞ্জয় সেনের কথাই ধরা যাক। তবে মাথায় রাখতে হবে বাংলাকে সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন করানো, মহমেডানকে কলকাতা লিগে কোচিং করানো আর আই িলগে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের দািয়ত্ব সামলানো এক নয়। মৃদুলের কৃতিত্বকে খাটো না করেই বলছি, কলকাতা লিগের সেই গুরুত্ব নেই। অতীতে সেরা ফুটবলারদের নিয়ে সন্তোষের রাজ্য দল হত। আর এখন সন্তোষ শিক্ষানবিশ ফুটবলারদের মঞ্চ। অন্যভাবে দেখলে নিজেকে তুলে ধরার জন্য মৃদুলের কাছে এটা বড় মঞ্চ ছিল। এখন অবশ্য আর ভেবে লাভ নেই। নতুন কোচকে আই লিগের বাকি দুটো ম্যাচে ফুটবলারদের বুঝে নিতে হবে। সেই অভিজ্ঞতা ফেডারেশন কাপে কাজে লাগবে।
মৃদুল ছিটকে যাওয়ায় ফের কোচ বাছাইয়ের চ্যালেঞ্জ কর্তাদের সামনে। আমার মতে বাঙালি কোচের দিকেই জোর দেওয়া উচিত। বিদেশি বা ভিন রাজ্যের যত বড়ই কোচ হোন না কেন, বাংলার ফুটবলের আবেগের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন না। যদিও এখন লাইসেন্সিং একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে অনেক বাঙালি কোচের নাম বাতিলের তািলকায় চলে যাবে। গতবার এরকম পরিস্থিতিতেই বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের পরিবর্ত হিসেবে মর্গানকে আনা হয়েছিল। সমস্যা না থাকলে আবার বিশ্বজিৎকে ফিরিয়ে আনতে সমস্যা কোথায়? বড় ক্লাবে কোচের খুব বেশি ভূমিকা থাকে, এমনটা মনে করি না। আমাদের সময়ে কোচ ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এখানে ম্যান ম্যানেজমেন্টটাই বড় কথা। অতীতে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে ইস্টবেঙ্গলে জড়িত থাকার সুবাদে বিশ্বজিৎ সেটা ভালই পারবে বলে বিশ্বাস করি। পেশাদার ফুটবলাররা প্রত্যেকেই পারফর্ম করতে মােঠ নামে। ওরা জানে এবার পারফর্ম করতে না পারলে পরের মরশুমে ক্লাব পেতে সমস্যা হবে। কীভাবে ওদের থেকে সেরাটা বের করে আনতে হবে, এখানেই বড় ক্লাবের কোচের ভূমিকা। ফুটবলারদের মানসিকতা বুঝতে না পারলে তার থেকে সেরাটা বের করে আনা সম্ভব নয়।
শুনছি ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের মধ্যেও বিতর্ক। যেখানে মর্গানের নামও জড়িয়েছিল। এটা কাম্য নয়। আমাদের সময় ফুটবল সচিব ছিলেন অজয় শ্রীমানি। ৭২–৭৫ সাল পর্যন্ত ওঁর সময়ে ইস্টবেঙ্গল যত ট্রফি জিতেছে, মনে হয় এরকম ধারাবাহিক সাফল্য কোনও ক্লাবের নেই। অথচ তৎকালীন ক্লাব সচিব নৃপেন দাস  কখনই ফুটবলের বিষয়ে মাথা ঘামাতেন না। প্রত্যেকের নিজস্ব ভূমিকা আছে। তা না হলে তো ক্লাব সচিবই সব সামলে দিতে পারতেন, ফুটবল সচিবের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। আশা করি ক্লাবের স্বার্থে কর্তারাও নতুন কোচকে সবরকম সহযোগিতা করবেন।

No comments:

Post a Comment

Pages