টানা চার ম্যাচে হার, এবারও স্বপ্নভঙ্গ ইস্ট বেঙ্গলের - অভিজিৎ সরকার । বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

টানা চার ম্যাচে হার, এবারও স্বপ্নভঙ্গ ইস্ট বেঙ্গলের - অভিজিৎ সরকার । বর্তমান

Share This

মেরেকেটে হাজার খানেক সমর্থক। খেলার আগে ও পরে মরগ্যানের নামে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি। সেটাও বুদবুদের মতো মিলিয়ে গেল ক্ষণিকের মধ্যে। বরং শুক্রবার ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে সমর্থকদের বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল কিছুটা বেশি। বিক্ষোভ করে ক্লান্ত লাল-হলুদ জনতা। রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে আই লিগের ম্যাচে ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের কাছে এক গোলে হারার পর ইস্ট বেঙ্গলের কয়েকজন সমর্থক বলে গেলেন, ‘বিক্ষোভ করে কী হবে! এই দল জেতার নয়, ঘুরে দাঁড়াতেও পারবে না। আই লিগ আর আমাদের ভাগ্যে নেই!’

বাংলা নতুন বছরে হার দিয়ে শুরু ইস্ট বেঙ্গলের। পুনের দলের কাছে হেরে আই লিগে টানা চারটি ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ে এবারের মতো আই লিগ জয়ের স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেল মরগ্যান-ব্রিগেডের। ১৬ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট লিগ টেবলে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে লাল-হলুদ। বাকি রয়েছে দুটি ম্যাচ। বুকেনিয়া-রবিনদের যা শারীরিক ভাষা, তাতে মনে হল তাঁরা কোনওরকমে লিগের খেলা শেষ করতে পারলে বাঁচেন! 
এদিন লাল-হলুদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালেন শিবাজিয়ান্সের অভিজ্ঞ বাঙালি গোলরক্ষক সুব্রত পাল। গত কয়েকটি ম্যাচে বাজে গোল খাওয়ার পর পুরানো দলের বিরুদ্ধে ম্যাচকে নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন তিনি। আর ইস্ট বেঙ্গলের অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার ক্রিস পেইন সত্যিই ‘পেইনফুল’ হয়ে দাঁড়ালেন দলের কাছে। মনে হল মাঠে ঘুরতে এসেছেন! একাই অন্তত তিন থেকে চারটি গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন। ভারি শরীরের পেইন না পারেন ভালো থ্রু পাস বাড়াতে, না পারেন সঠিক নিশানায় সেন্টার রাখতে। চতুর্থ বিদেশি ফুটবলার গত কয়েকবছর মতো এবারও ইস্ট বেঙ্গলকে ডুবিয়ে দিলেন।
জয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে এদিন হঠাৎ ৩-৫-২ ফর্মেশনে দল সাজান ইস্ট বেঙ্গল কোচ মরগ্যান। তাতে আরও দুর্দশা বাড়ল দলের। সবাই নিজের পজিশন সারা ম্যাচে খুঁজে গেলেন! সঞ্জু প্রধান, জেরি, হোলিচরণদের উইং প্লে’র সামনে খাবি খেলেন ইস্ট বেঙ্গলের স্টপার রাহুল ভেকের সঙ্গে বাকি দুই ডিফেন্ডার। ম্যাচের প্রথম ১৩ মিনিটের মধ্যেই শিবাজিয়ান্স দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করে। একবার ডানদিক থেকে সঞ্জু প্রধানের মাইনাস গোলে ঠেলতে পারেননি জেরি। তারপর একবার জেরি ইস্ট বেঙ্গল বক্সে ওপেন সিটার মিস করেন। ২৩ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গল প্রথম সুযোগ পায়। জ্যাকিচাঁদের তোলা বিপক্ষের দুই দীর্ঘদেহী স্টপারের মাথার উপর দিয়ে ওভারহেড লব ধরে ক্রিস পেইন একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে সুব্রত পালের পাশ দিয়ে বল গোলে ঠেলতে পারেননি। চার মিনিট পরে বিকাশ জাইরুর থ্রু ধরে পেইন বিপক্ষ বক্সে ঠিকমতো ট্র্যাপ করতে পারলে গোলের সম্ভাবনা ছিল। ২৯ মিনিটে ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের একমাত্র গোল। বাঁ-দিক থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জুয়ান বারাসোর সেন্টার ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্ডাররা অফসাইড ট্র্যাপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে ভুল করেন। শুভাশিস, বুকেনিয়ার মধ্যে দিয়ে অনায়াসে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন জেরি (১-০)। মাঠের বাইরে বসে থাকতে থাকতে ইস্ট বেঙ্গল গোলরক্ষক শুভাশিসের ম্যাচ ফিটনেস ও আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে। 
এদিন মরগ্যানের দল নির্বাচন নিয়ে লাল-হলুদ শিবিরে ছিল প্রবল ক্ষোভ। প্রধান গেমমেকার ওয়েডসনকে প্রথম একাদশে রাখেননি মরগ্যান। বিরতির সময় হাইতিয়ান ফুটবলার এই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। স্টপার অর্ণব মণ্ডল ও স্ট্রাইকার হাওকিপকে তিনি স্কোয়াডেই রাখেননি। মহম্মদ রফিককে ইস্ট বেঙ্গল কোচ ভুলেই গিয়েছেন। এদিন আবার ম্যাচে স্কোয়াডের ফুটবলার বাদে বাকিদের মাঠেই আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবুও দলের টানে গ্যালারিতে ছিলেন চতুর্থ গোলরক্ষক দিব্যেন্দু সরকার। ৩৩ মিনিটে রোলিনের শট সুব্রত পা দিয়ে সেভ করলে তা পোস্টে ধাক্কা খায়, ফিরতি বলে বিকাশ জাইরুর শট সেভ করেন সুব্রতই। বিরতির ঠিক আগে রোলিনের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বিকাশের শট হার মানাতে পারেনি সোদপুরের মিষ্টুকে। 
বিরতির পর ইস্ট বেঙ্গল কোচ অবিনাশের বদলে ওয়েডসনকে নামানোর পর লাল-হলুদ আক্রমণের তীব্রতা বাড়ে। এই অর্ধে খেলাটা হল সুব্রত বনাম ইস্ট বেঙ্গলের। ৫২ মিনিটে রাহুল ভেকের ইনস্টেপে নেওয়া শট পাখির মতো উড়ে গিয়ে ফিস্ট করেন সুব্রত। তারপর পেইন-রবিনের কাছে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ১৬ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শিবাজিয়ান্স লিগ টেবলে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
ইস্ট বেঙ্গল : শুভাশিস রায়চৌধুরি, গুরবিন্দর সিং, রাহুল ভেকে, বুকেনিয়া, জ্যাকিচাঁদ সিং, রোলিন বর্জেস, মেহতাব হোসেন, বিকাশ জাইরু (রোমিও ফার্নান্ডেজ), অবিনাশ রুইদাস (ওয়েডসন), ক্রিস পেইন (লালরিনডিকা), রবিন সিং।

No comments:

Post a Comment

Pages