বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - বেকেনবাওয়ার । দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - বেকেনবাওয়ার । দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত

Share This




বিশ্বকাপ সবসময় নতুন তারকার জন্ম দেয়। আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যে প্রতিষ্ঠিত তারকার ও পতন হয়েছে বিশ্বকাপে। যেখানে তাঁর প্রতি মানুষের আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা থাকলেও স্ফুলিঙ্গ হয়ে তা অন্তর্নিহিত হয়ে যায়। আবার এমন ও ঘটনা ঘটেছে, যে তথাকথিত নামকরা খেলোয়াড় মহাতারকা তে রুপান্তরিত হয়েছেন। এমন ই একজন খেলোয়াড় হলেন Franz Anton Beckenbauer । ডাক নাম কাইজার। খেলার মাঠে যাকে অনেকে ‘Rock of Gibraltar’ এর সাথে তুলনা করেন। রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড় হিসেবে তিনি এতটাই নির্ভরযোগ্য ছিলেন। শুধু তাই নয়, রক্ষণ ও মাঝমাঠের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখার কাজটিও তিনি নিখুঁত ভাবে করতেন। 



যদিও পেশাদার ফুটবল আরম্ভ করেন একজন মাঝমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে কিন্তু পরবর্তী কালে একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তাঁর দেশ জার্মানির হয়ে মোট ১০৩ টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন ও রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হওয়া স্বত্ত্বেও ১৪ টি গোল করেছেন। একই সঙ্গে ক্লাব ফুটবলেও ৫৭২ টি খেলাতে অংশ নিয়ে ৮৩ টি গোল করেছেন। রক্ষণে তাঁর উপস্তিতি সবসময় তাঁর দলকে অতিরিক্ত ভরসা যোগাতো। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই খেলোয়াড়ের জন্ম ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ই সেপ্টেম্বর জার্মানির মিউনিখে। তখন মিউনিখের একরকম ভগ্নদশা চলছে। তাঁর বাবা কাজ করতেন পোস্ট অফিস এ। এবং আশ্চর্য জনক ভাবে Beckenbauer এর বাবা ফুটবল খেলার প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষণ করলেও তাঁর শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি একটা অদ্ভুত টান জন্মে ওঠে। যার দরুন তিনি মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই ফুটবলে নিজের মন প্রাণ সঁপে দেন এবং SC Munich এর যুব দলে যোগ দেন ১৯৫৪ তে।



তারপর ১৯৫৯ সালে তিনি যোগ দেন Bayern Munich এর যুব দলে। ক্রমে দুর্দান্ত ফুটবলের কারণে সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন ও ১৯৬৪ তে প্রথম বার সিনিয়র দলের হয়ে খেলেন। তখন Bayern Munich ছিল জার্মানির দ্বিতীয় ডিভিসনের দল। কিন্তু Beckenbauer তাঁর প্রথম বছরেই Bayern Munich এর হয়ে অসাধারণ ফুটবল খেলেন এবং Regionalliga Süd এ Bayern কে চ্যাম্পিয়ন করে Bundesliga তে Bayern এর উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হন। ক্রমে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পরে ও তিনি Bayern Munich এর দলে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলেন। পরবর্তী কালে Bayern Munich এর হয়ে জেতেন ৪ টি করে Bundesliga ও DFB Pokal খেতাব, ৩ টি European Cup, ১ টি করে UEFA Cup Winners' Cup ও Intercontinental Cup। এছাড়াও Hamburger SV হয়েও একবার Bundesliga জেতেন।



এরপর চলে যান New York Cosmos এর হয়ে খেলতে। সেখানে গিয়ে জেতেন ৩ টি North American Soccer League ও ২ টি Trans-Atlantic Cup। এতো গেল ক্লাব ফুটবলের গল্প। এছাড়া তাঁর দেশ জার্মানির জার্সি গায়েও তিনি অসাধারণ সব কৃতিত্ব রেখে গেছেন। বিশেষত ১৯৭০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে তাঁর দুঃসাহসী লড়াই ফুটবলের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে। যদিও সেই খেলায় জার্মানি ৩-৪ গোলে পরাজিত হয় কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তাঁর কাঁধে dislocation হওয়ার পরেও দেশের জার্সি গায়ে অসহ্য যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়া কে আজ লোকে কুর্নিশ করে। পরে ফিফা সেই ম্যাচ টিকে Game of the Century আখ্যা দেয় ও জার্মানি তৃতীয় স্থান অধিকার করে সেই বিশ্বকাপে। এরপর ১৯৭১ এ জার্মানির অধিনায়ক হন তিনি ও ১৯৭২ এ Euro Championship পশ্চিম জার্মানি কে চ্যাম্পিয়ন করান ফাইনালে Soviet Union কে ৩-০ হারিয়ে। এরপর আসে ১৯৭৪ এর বিশ্বকাপ। অদম্য হার না মানা লড়াই ও দুর্ধর্ষ ফুটবলের অসামান্য নজির গোটা ফুটবল দুনিয়ার সামনে উপস্তাপিত করেন তিনি। বিশেষত ফাইনালে Netherlands এর মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কে দুর্দান্ত খেলে ২-১ এ হারিয়ে দেয় পশ্চিম জার্মানি। Netherlands তখন ছিল বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে শক্তিশালী দল এবং তাঁদের দলে ছিলেন Johan Cruyff এর মতন মহান ফুটবলার। কিন্তু ফাইনালে তাঁর দাপটে Cruyff প্রায় কিছুই করতে পারেননি। 

এরপর ১৯৭৬ সালেও Euro Championship এ তাঁর দেশ কে Runners করেন। কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষ টিকে বিচার করা যাবে না। একের পর এক বিতর্ক স্বত্ত্বেও তাঁর দেশ বা ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতা এতটুকু কমেনি। ২ বার Ballon D’Or ছাড়াও জিতেছেন ৪ বার German Footballer of the Year এর খেতাব। এছাড়াও আরও অনেক খেতাব জিতেছেন। তিনি হচ্ছেন সেই দুজন খেলোয়াড়ের একজন যিনি খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন, খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ এ ও কোচ হিসেবে ১৯৯০ তে। তাঁকে World Team of the 20th Century তে নেওয়া হয় ১৯৯৮ তে ও FIFA World Cup Dream Team এ নেওয়া হয় ২০০২ তে। পেয়েছেন FIFA Order of Merit ও। বলাই যায় শতাব্দীর অন্যতম সেরা ফুটবলার দের একজন হিসেবেই তাঁকে লোকে মনে রাখবে।

No comments:

Post a Comment

Pages