পাঞ্জাবকে হারিয়ে চারে উঠে এল কেকেআর | বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

পাঞ্জাবকে হারিয়ে চারে উঠে এল কেকেআর | বর্তমান

Share This

গেইলের মাঠে বিধ্বংসী ব্যাটিং কার্তিক-নারিনের

কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৪৫/৬   কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ২১৪/৮


নিজস্ব প্রতিবেদন: মরণ-বাঁচন ম্যাচে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে ৩১ রানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবলে চার নম্বরে উঠে এল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ১২ ম্যাচে কেকেআরের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। একটা ম্যাচ কম খেলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ঝুলিতেও ১২ পয়েন্ট। টসে জিতে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান কিংস ইলেভেন অধিনায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি ভেবেছিলেন, হোলকার স্টেডিয়ামের পিচে রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে সুবিধা হবে। কিন্তু নাইটরা ৬ উইকেটে ২৪৫ রান তুলে ফেলায় প্রবল চাপে পড়ে যায় পাঞ্জাব। আইপিএলের ইতিহাসে এটি চতুর্থ সর্বাধিক রান। তবে কঠিন টার্গেট তাড়া করতে নেমে লোকেশ রাহুল, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা দারুণ লড়াই করেছেন। কিংস ইলেভেন ৮ উইকেটে তোলে ২১৪ রান তোলে। 

আগেও লিখেছিলাম, পাওয়ার প্লে’তে সুনীল নারিনকে ব্যাট করতে পাঠানো উচিত। কারণ, ফিল্ড রেস্ট্রিকশনকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারটি। এদিন সেটা আবারও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন নারিন। ৩৬ বলে তাঁর সংগ্রহ ৭৫ রান। তারকা ব্যাটসম্যানের মতোই তিনি কিংস ইলেভেনের বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করেন। নারিনের ইনিংসে রয়েছে নয়টি বাউন্ডারি ও চারটি ওভার বাউন্ডারি। ওপেনিং জুটিতে ক্রিস লিনের সঙ্গে নারিন ৫৩ রান যোগ করেন। 

গত ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ইডেনে ১০২ রানে হেরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল দীনেশ কার্তিকদের। তাই এদিন মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিলেন নাইটরা। শুধু জেতা নয়, নেট রান রেট বাড়ানোর দিকেও তাদের নজর রাখতে হয়েছিল। ছোট মাঠ, ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ২৪৫ রান তোলা মোটেই কঠিন কাজ ছিল না। কেকেআরের স্কোরটা আরও বেশি হতেও পারত। তবে এটা দেখা যাচ্ছে, নারিন যেদিন বড় রান করছেন, সেদিন লিন ব্যর্থ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে শনিবারের ম্যাচেও। লিন শুরুটা ভালো করেও ২৭ রানে আউট হয়ে যান। নারিনকে থামাতে কালঘাম ছুটেছে পাঞ্জাবের অধিনায়ক অশ্বিনের। ২৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নারিন। তবে সাত রানের মাথায় নারিনের ক্যাচটা যদি কিংস ইলেভেনের আফগান স্পিনার মুজিব-উর-রহমান ধরতে পারতেন, তাহলে ফল অন্যরকম হলেও হতে পারত। তবে কেকেআর ইনিংসে ২৩ রানের মাথায় বোলার মুজিব চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ফলে পাঞ্জাবের বোলিং অপশন কমে যায়। তবে নারিন সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। বড় স্কোর খাড়া করার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে রবীন উথাপ্পার সঙ্গে জুটি বেঁধে যোগ করেছেন ৭৫ রান। 

উথাপ্পা এবারের আইপিএলে শুরুটা ভালো করেও বড় ইনিংস গড়তে পারছেন না। সেই রোগ এই ম্যাচেও তিনি সারিয়ে উঠতে পারলেন না। উথাপ্পা ১৭ বলে করেন ২৪ রান। আন্দ্রে রাসেলকে চার নম্বরে নামিয়ে কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট রানের গতি আরও বাড়াতে চেয়েছিলেন। তাঁদের এই কৌশল অনেকটাই সফল। রাসেল ১৪ বলে ৩১ রান করেন। অনবদ্য ব্যাটিং করেছেন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকও। কয়েকদিন আগে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন ডি কে’র। মহারাজ বলেছিলেন, ধোনির পরে ভারতীয় দলে যদি কাউকে সুযোগ দিতে হয়, তাহলে সেটা দীনেশ কার্তিক। 

কেকেআর মালিকরা তাঁকে অধিনায়ক করে যে মোটেই ভুল করেননি, সেটা ব্যাট হাতে বুঝিয়ে দিয়েছেন ডি কে। দলের ব্যর্থতার দায় অধিনায়ক হিসাবে তাঁর কাধে চাপতে পারে ঠিকই, তবে নেতৃত্বের বোঝা নিয়েও তিনি যে সাহসী ব্যাটিং উপহার দিচ্ছেন তা নাইট সমর্থকদের খুশি করবে বলেই মনে হয়। কার্তিক পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে ২৩ বলে করেন ৫০ রান। তবে শুভমান গিলের মতো তরুণ ক্রিকেটারের ব্যাটিং অর্ডার বার বার বদল ঘটানোর যৌক্তিকতা দেখছি না। গিল ৮ বলে ১৬ ও নীতীশ রানা ৪ বলে ১১ রান যোগ করেন। 

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব এই ম্যাচটা জিতে যেত যদি ওপেনিং জুটিতে ক্রিস গেইল একটা অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলতে পারতেন। গেইল ও রাহুলের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল কেকেআরের বোলারদের কপালে হয়তো দুঃখ রয়েছে। রাহুল প্রথম ওভারেই সুনীল নারিনের বিরুদ্ধে দু’টি ছক্কা হাঁকান। গেইলও চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। ১৩ রানের মাথায় উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক তাঁর ক্যাচ ফেললেও ক্যারিবিয়ান ‘দৈত্য’ ব্যাট হাতে বিধ্বংসী খেলায় মেতে উঠতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে আন্দ্রে রাসেল আউট করেন গেইলকে (২১)। পরের বলেই তিনি মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে (০) ডাগ-আউটে ফেরান। জোড়া ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে কিংস ইলেভেন। রাসেল ব্যাটে না পারলেও বল হাতে কেকেআরকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। তবে তিনি পুরো ফিট হলে দলকে আরও ভালো সার্ভিস দিতে পারতেন। 

লোকেশ রাহুল ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছেন। এই মুহূর্তে তিনি একাদশ আইপিএলের সর্বাধিক রানের মালিক। ৫৩৭ রান করেছেন তিনি। রাহুল এদিন ২৯ বলে ৬৬ রান করেন। তাঁর ইনিংসে রয়েছে দু’টি বাউন্ডারি ও সাতটি ওভার বাউন্ডারি। প্রিভিউতেই লিখেছিলাম, কেকেআর যদি গেইল ও রাহুলকে দ্রুত ফেরাতে পারে তাহলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে হারানো সহজ হয়ে যাবে। সেটাই ঘটেছে। করুণ নায়ার তিন রানে আউট হন। ২০ বলে ৩৪ রান করেন অ্যারন ফিনচ। ১৯ রানে আউট হন অক্ষর প্যাটেল। অধিনায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে গত ম্যাচে টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পাঠানো নিয়ে কিংস ইলেভেনের মালকিন প্রীতি জিন্টা কৈফিয়ত চেয়েছিলেন দলের ক্রিকেট ডিরেক্টর বীরেন্দ্র সেওয়াগের কাছে। তবে বীরু যে ভুল করেননি, সেটা অশ্বিন এদিন ২২ বলে ৪৫ রান করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যদিও এই ইনিংস ম্যাচ জেতানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। কেকেআরের হয়ে রাসেল তিনটি ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা দু’টি উইকেট নিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

Pages