বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - মারাদোনা | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - মারাদোনা | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত

Share This



ফুটবল মাঠে কিছু কিছু চরিত্র আছে, যাদের দেখে তাঁদের সহ খেলোয়াড় রা তো বটেই, সর্বোপরি গোটা দেশ উদ্বুদ্ধ হয়। বলা চলে, সে একাই কাণ্ডারি হয়ে গোটা দেশকে সাফল্যের পথে চালিত করে। তাঁরা হয়ে ওঠেন সমগ্র একটি জাতির স্বপ্ন পূরণের কাণ্ডারি। এমনই একজনের কথা বলব আজকে। তাঁর নাম Diego Armando Maradona Franco। অথবা Diego Maradona । যাকে কিনা এককথায় বলা হয় ফুটবলের রাজপুত্র। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে যার নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে পেলের সাথে যুগ্ম ভাবে। 

বিভিন্ন ফুটবল বিশেষজ্ঞ, ফুটবল প্রেমী দের অন্যতম আলোচনার বিষয় হচ্ছে, কে বেশী বড়, পেলে না মারাদোনা? বহু যুক্তি খাঁড়া করা হয়েছে এই ব্যাপারে, বহু তর্ক বিতর্কের ঝড় ও বয়ে গেছে এই আলোচনা কে কেন্দ্র করে। তা তর্ক বিতর্ক যাই থাক, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে যেভাবে তিনি প্রায় একার হাতে আর্জেন্টিনা কে চ্যাম্পিয়ন করেন তারপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনও সংশয় থাকতে পারে না। একই সঙ্গে বিতর্ক ছিল তাঁর সারাজীবনের নিত্যসঙ্গী। তা সে 'Hand of God' গোলই হোক বা ডোপ কেলেঙ্কারি ই হোক। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের জন্ম ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে অক্টোবর বুয়েনস আইয়ারসে। তাঁরা ছিলেন ৬ ভাই বোন। শৈশব অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে কাটে। একেক সময় ভালো করে খাওয়াও জুটত না তাঁদের। কিন্তু এতসমস্ত কষ্টের মধ্যেও মারাদোনার ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ ছিল অমোঘ। সেই আকর্ষণ ই পরে ভালবাসা তে পরিণত হয়। 



শৈশবে একটা সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল নিয়ে নানান রকম ভাবে অনুশীলন করতেন। তাঁর পায়ের কাজ এতটাই ভালো ছিল যে মাত্র ১২ বছর বয়েসে তাঁকে বিভিন্ন ফুটবল ম্যাচের বিরতিতে কলা প্রদর্শনীর জন্য আমন্ত্রণ করা হতো। ক্রমে তাঁর নাম এতটাই ছড়িয়ে পরে যে মাত্র ১৬ বছর বয়েসে Argentinos Juniors এর হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়ে যায়। সেই অল্প বয়েসেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলে আলোড়ন ফেলে দেন। পরে River plate ক্লাব তাঁকে অনেক টাকার প্রস্তাব দিলেও প্রাপ্য সম্মান না দেওয়ার দরুন তিনি Boca Juniors এ সই করেন। Argentine Primera División: 1981 Metropolitano জেতেন Boca Juniors এর হয়ে। তারপর চলে যান Barcelona তে যেখানে তিনি দলের হয়ে জেতেন একটি করে Copa del Rey, Copa de la Liga ও Supercopa de España। পরবর্তীকালে Napoli র হয়ে জেতেন দুটি Serie A খেতাব, একটি করে Coppa Italia, UEFA Cup ও Supercoppa Italiana। ক্লাব ফুটবলে ৫৯০ টি খেলাতে ৩১২ টি গোল করেন। কিন্তু এইসব পরিসংখ্যান তাঁর প্রতিভা বিচারের পক্ষে নগণ্য মাত্র।

তাঁর প্রতিভার আসল পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর দেশ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে। যেখানে তিনি বরাবর স্বমহিমা তে উজ্জ্বল। দেশের হয়ে খেলেছেন ৪ টি বিশ্বকাপ। ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ১৯৯৪। গোল করেছেন ৩৪ টি ৯১ টি খেলাতে। তারমধ্যে বিশ্বকাপে গোল ৮ টি। ১৯৮২ তে তাঁর প্রথম বিশ্বকাপে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি এবং আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বেই বিদায় নেয়। তারপর আসে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ। যেই বিশ্বকাপ কে সবাই মনে রেখেছে শুধুমাত্র মারাদোনার অসামান্য স্কিলের জন্য। সেই বিশ্বকাপে ৫ টি গোল করেন ও ৫ টি গোলের পাস তিনি বাড়ান। কিন্তু শুধু গোল করা বা গোলের পাস বাড়ানোই নয়, গোটা মাঠ জুড়ে খেলতেন তিনি। নিজেদের হাফ থেকে বল ধরে একের পর এক খেলোয়াড় কে অসাধারণ ডজ বা ড্রিবল করে কাটিয়ে দূর্বার গতি তে গোলের সামনে পৌঁছে যেতেন তিনি। আদতে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হলেও মাঝমাঠ থেকে ফরওয়ার্ড, যে কোনও ভূমিকাতে তিনি ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ। করতেন দুর্ধর্ষ সব গোল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে প্রথম তিন টি খেলাতে মাত্র একটি গোল করলেও আর্জেন্টিনা র জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি ই। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড এর বিরুদ্ধে তাঁর খেলা পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে আছে। প্রথম গোলটি বিতর্কিত 'Hand of God' হলেও দ্বিতীয় গোলটির ক্ষেত্রে তাঁর মাহাত্ম্য অনস্বীকার্য। নিজেদের হাফ থেকে বল ধরে প্রায় ৫ জন এবং গোলরক্ষক কে কাটিয়ে একক দক্ষতায় গোল করেন তিনি। সেই গোলটি পরে শতাব্দীর সেরা গোল বলে বিবেচিত হয়। 



তারপর সেমি ফাইনালে বেলজিয়ামের সাথে ও দুটি গোল করেন তিনি। ফাইনালে গোল না পেলেও অসাধারণ স্কিলের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে দলের জয়ের ভিত্তি প্রস্তর রচনা করেন। আর্জেন্টিনা কে জেতান দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।নিজে পান বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরষ্কার। ১৯৯০ তে ১৯৮৬ র মত ছন্দে না থাকলেও আর্জেন্টিনা কে ফাইনালে তোলেন। কিন্তু তারপর ই ডোপ বিতর্কের কালো ছায়া তাঁর ফুটবল কে গ্রাস করে। ফাইনালে ডোপ পরীক্ষাতে পাশ না করাতে খেলতে পারলেন না। আর্জেন্টিনা ও হেরে গেল। এরপর ক্রমশ ডোপের কবলে পরে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে থাকেন। এর মাঝেই আর্জেন্টিনা কে ১৯৯৩ তে Artemio Franchi Trophy জেতান। ১৯৯৪ তে আর্জেন্টিনা গ্রুপ থেকেই বিদায় নেয়। সেই মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপ। তাঁর মত একজন অসাধারণ প্রতিভাবান ফুটবলারের কেরিয়ার এভাবে ডোপের কবলে পরে অকালে বিনষ্ট হওয়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্য জনক। কিন্তু তাও ফুটবল মাঠে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা রেখে গেছেন। জিতেছেন একাধিক ব্যাক্তিগত খেতাব। পেলে না তিনি, কে বেশী বড়, সেই তর্ক চলবেই। কিন্তু এটা নিয়ে কোনও তর্ক বিতর্কের অবকাশ নেই যে তাঁর মত খেলোয়াড় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছেন। 



মিশেল প্লাতিনি তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, "Diego was capable of things no one else could match. The things I could do with a football, he could do with an orange." গ্যারি লিনেকার বলেছেন, "When Diego scored that second goal against us, I felt like applauding. I'd never felt like that before, but it's true... and not just because it was such an important game. It was impossible to score such a beautiful goal. He's the greatest player of all time, by a long way. A genuine phenomenon."। তাঁর মত খেলোয়াড় যে কোন খেলার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তাঁর সম্পর্কে বলতে গেলে একটা কথাই বলতে হয়, ' Legends live in the hearts of millions".

No comments:

Post a Comment

Pages