কখনও খেলব না বার্সেলোনার বিপক্ষে, বলে দিলেন শিল্পী | আনন্দবাজার পত্রিকা - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

কখনও খেলব না বার্সেলোনার বিপক্ষে, বলে দিলেন শিল্পী | আনন্দবাজার পত্রিকা

Share This

লা লিগায় ২৫ তম খেতাবের মাত্র একধাপ দূরে বার্সেলোনা। অথচ দলের অন্দরমহলে বিষাদের ছায়া। বার্সেলোনার সঙ্গে ২২ বছরের সম্পর্ক যে ছিন্ন করেছেন মাঝমাঠের জাদুকর আন্দ্রে ইনিয়েস্তা।

শুক্রবার দুপুরে ক্যাম্প ন্যু-র সাংবাদিক বৈঠকের কক্ষের আবহটাই বদলে গিয়েছিল যখন বার্সেলোনা ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন ইনিয়েস্তা। কোপা দেল রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতেই বার্সেলোনা তারকা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ক্লাব ছাড়ার। এ দিন সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময় আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন, ‘‘বার্সেলোনায় এটাই আমার শেষ মরসুম। অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। সেটা সবাইকে জানানোর জন্যই এই সাংবাদিক বৈঠক। আমার জীবনের কঠিনতম দিন। কারণ, কোনও ক্লাবে পুরো জীবন কাটানোর পরে বিদায় নেওয়াটা একেবারেই সহজ নয়।’’

ইনিয়েস্তা যে আগামী মরসুমে আর বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন না, তা প্রত্যাশিতই ছিল। তা সত্ত্বেও সাংবাদিক বৈঠকে ইনিয়েস্তা সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় কেঁদে ফেলেন তাঁর সতীর্থরা। চোখের কোণ ভিজে গিয়েছিল সাংবাদিকদেরও। হবে নাই বা কেন। ২২ বছর ধরেই যে বার্সেলোনা আর ইনিয়েস্তা সমার্থক হয়ে উঠেছিল।

বার্সেলোনার হয়ে ১৬ বছরে ৩১টি ট্রফি জিতেছেন তিনি। এই মরসুমে লা লিগা খেতাব নিশ্চিত করে ফেলার নেপথ্যেও মুখ্য ভূমিকা ইনিয়েস্তার। অথচ আগামী মরসুম থেকে আর তাঁকে খেলতে দেখা যাবে না বার্সেলোনার হয়ে। দেখা যাবে না নীল-মেরুন জার্সি গায়ে ক্যাম্প ন্যু-র সবুজ ঘাসে আলপনা আঁকতে। দেখা যাবে না লিয়োনেল মেসির সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে এগিয়ে যেতে। যদিও এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দেখা যায়নি মেসিকে। ছিলেন না লুইস সুয়ারেসও। ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, ইনিয়েস্তা মাত্র তিন ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আসতে পারেননি মেসি ও সুয়ারেস। তবে ছিলেন বার্সেলোনা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দে।

 স্পেনের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার বলছিলেন, ‘‘২২ বছর কাটানোর পরে আমি অনুভব করতে পারছি, বার্সেলোনার ফুটবলার হওয়ার অর্থ কী। আমার কাছে বিশ্বের সেরা ক্লাব বার্সেলোনা।’’ যোগ করেন, ‘‘স্বপ্ন দেখতাম বার্সেলোনা থেকেই অবসর নেওয়ার। তবে আমি কখনওই ক্লাবকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চাইনি। সে রকম কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।’’

বার্সেলোনা থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে ফুয়েনতিয়ালবিয়া গ্রামে ১৯৮৪ সালের ১১ মে জন্ম ইনিয়েস্তার। ১২ বছর বয়সে তাঁকে লা মাসিয়ায় ভর্তি করে দেন বাবা। বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বলছিলেন, ‘‘আমি এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি লা মাসিয়া ও বার্সেলোনার জন্যই।’’ সতীর্থ ও ভক্তদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এত বছর ধরে পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’’ 

তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও যে বার্সেলোনার প্রভাব রয়েছে, খোলাখুলি বলেছেন ইনিয়েস্তা। বলেছেন, ‘‘বার্সেলোনাতেই এমন এক জনকে পেয়েছি, যে আমার জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত সুন্দর করে তুলেছে। সে আমার স্ত্রী। এ ছাড়া এই বার্সেলোনাতেই পেয়েছি জীবনের অমূল্য সম্পদ তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে)।’’ লা মাসিয়া থেকে ২০০২ সালে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে সুযোগ পান ইনিয়েস্তা। ২০০৮ সালে পরিচয় হয় আনা অর্তিসের সঙ্গে। চার বছরের মধ্যেই বিয়ে।

বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইনিয়েস্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যমের দাবি, চিনের ক্লাবে সই করবেন তিনি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে দেখা যাবে তাঁকে। আগামী মরসুমে কোথায় খেলবেন, তা স্পষ্ট করে না বললেও ইনিয়েস্তা জানিয়ে দিয়েছেন, বার্সেলোনার বিরুদ্ধে কখনও মাঠে নামবেন না। বলেছেন, ‘‘আমি কখনওই বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলব না। তাই ইউরোপের কোনও ক্লাবে সই করার সম্ভাবনা নেই।’’

বিদায়বেলাতেও বার্সেলোনার প্রতি দায়বদ্ধতা অটুট ইনিয়েস্তার।

No comments:

Post a Comment

Pages