বুদ্ধ পূর্ণিমায় মোহন বাগানে অমাবস্যার অন্ধকার
নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: গণ ইস্তফা নিয়ে সোমবার দিনভর সরগরম ছিল মোহন বাগান। সত্যজিৎ চ্যাটার্জি- বিদেশ বসুদের মতো প্রাক্তন ফুটবলারদের ইস্তফায় বুদ্ধ পূর্ণিমার পুণ্য লগ্নে মোহন বাগানে যেন অমাবস্যার অন্ধকার। তবে এখনও নিষ্ক্রিয় হয়নি মোহন বাগান কর্মসমিতি। আরও দুই নির্বাচিত সদস্য ইস্তফা দিলে সহ সচিব-অর্থ সচিবদের ‘মিশন’ পূর্ণ হবে।
গত বুধবার সত্যজিৎ বলেছিলেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্ট নিয়ে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা না নিলে মোহন বাগান প্রশাসনে উক্ত ব্যক্তিরা না’ও থাকতে পারেন। ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি তো রীতিমতো হুমকি দিয়ে এসেছিলেন। ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্টের ব্যাপারে সচিব খুব একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ এখনও নিতে পারেননি। রবিবার বিকেল থেকেই কর্মসমিতির বিভিন্ন সদস্যর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন সচিব বিরোধী কর্তারা। এক পদত্যাগী শীর্ষ কর্তা ফোনে কথা বলেন সদস্যদের সঙ্গে। এরপর ইস্তফাপত্রর বয়ান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসমিতির সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে যান সচিব বিরোধী শিবিরের কিছু অতি পরিচিত মুখ। কয়েকজন ফিরিয়ে দেন নানা অজুহাতে। কেউ দুই-তিন দিন সময় চেয়ে নেন। মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই তথা মোহন বাগান মাঠ সচিব তো মোবাইলটি ভয়েস মেলে ‘ফিট’ করে ঘোল খাইয়ে দেন। গণ ইস্তফাপত্রে তিনি এখনও সই করেননি। তার মানে এই নয় যে তিনি ‘সচিব প্রেমী।’ সচিব সভা ডাকলে তিনি অনুপস্থিত থেকে এই বিতর্কে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারেন।
সোমবার সকাল ন’টা থেকে ‘মিশন রেজিগনেশন’ পর্ব ফের শুরু হয়। পৌনে চারটার মধ্যে ১৪ জন কর্মসমিতির সদস্যর ইস্তফার ই-মেল সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছায়। কর্মসমিতির সদস্যরা ইস্তফা দেওয়ায় সচিব বিরোধীদের মধ্যে উল্লাস শুরু হয়। যদিও উল্লসিত হওয়ার মতো জায়গায় এখনও সহ সচিব- অর্থ সচিব অনুগামীরা আসেননি। কারণ, দু’দফায় দেওয়া ইস্তফার তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখা যাচ্ছে ১৬ জন পদত্যাগকারীর মধ্যে পাঁচজন কো- অপ্ট কিংবা বিশেষ আমন্ত্রিত। এদের ইস্তফার কোনও মূল্য নেই। মোহন বাগানের সংবিধান অনুসারে ক্লাবের কর্মসমিতিতে আছেন মোট ২০ জন সদস্য। এর মধ্যে ১০ জন বিভাগীয় সচিব। আর বাকি দশজন কর্মসমিতির সদস্য। এঁদেরই ভোটাধিকার আছে। এই নির্বাচিত ২০ জন সদস্য মনোনীত করেন সভাপতিকে। কর্মসমিতির সভায় তিনিই হন চেয়ারম্যান। কোনও ইস্যুতে ভোটাভুটি হয়ে টাই হলে তিনি কাস্টিং ভোট দিতে পারেন। কিন্তু মোহন বাগান সংবিধান অনুসারে সহ সভাপতি বা কো-অপ্ট কিংবা বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যদের ভোটাধিকার নেই।
সভাপতি হিসাবে টুটু বসু গত বছরের মে মাসে পদত্যাগ করেন। বাকি ২০ জন নির্বাচিত সদস্যর মধ্যে সহ সচিব ও অর্থ সচিব সহ ১১ জন ইস্তফা দিয়েছেন। মিডিয়ার কাছে দেওয়া চিঠিতে সচিবের উপর উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। কর্মসমিতির সদস্য তথা সদ্য সমাপ্ত ফুটবল মরশুমে টিম ম্যানেজারের ই- মেল অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো চিঠিতে লেখা আছে,‘ বকেয়া পেমেন্টের দাবিতে ফুটবলাররা এফপিএ’তে যাচ্ছেন। বারবার বলা সত্ত্বেও আপনি নিরুত্তাপ। আপনি যদি সত্যিকারের মোহন বাগানপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে এখনই ইস্তফা দিয়ে ক্লাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সাধারণ মানুষের কাছে ক্লাব সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাচ্ছে।’
সাদা চোখে মনে হতে পারে, ১১ জন সদস্য ইস্তফা দেওয়ায় মোহন বাগানের বর্তমান কমিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মসমিতির সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন। যা সচিবের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে সহ সচিব এবং অর্থ সচিবের নৈতিক জয়। তবে সচিবকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার ম্যাচে এখনও কাঙ্খিত জয় পাননি তাঁরা। কারণ, মোহন বাগান কর্মসমিতির সভায় কোরাম হতে প্রয়োজন এক তৃতীয়াংশ সদস্যর উপস্থিতি, অর্থাৎ সাতজন। তাই ১৪ জন সদস্য যতক্ষণ না ইস্তফা দিচ্ছেন ততক্ষণ পুরোপুরি সচিবকে ‘প্রত্যাঘাত’ করতে পারছেন না সহ সচিব- ফুটবল সচিবরা। আইপিএলের টিকিট তোলায় জটিলতা দেখা যেতে পারে বলে ক্রিকেট সচিব এখনও ইস্তফা দেননি। সিএবি’তে পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে তিনি বুধবার দুপুরের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে দেবেন। এরপরেও ইস্তফা দিতে অনিচ্ছুক নির্বাচিত আট সদস্যর মধ্যে দু’জনকে ইস্তফা দেওয়াতে পারলে সচিবের বিরুদ্ধে ‘জয়ী’ হবেন সহ সচিব- অর্থ সচিবরা। ওই অনিচ্ছুক আটজনের মধ্যে দুই জন সদস্য সহ সচিবদের সফট টার্গেট। এঁদের একজন ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলেকে ধরে মোহন বাগানের সাসপেনশন প্রত্যাহারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন জরিমানার ২০ শতাংশ। অপর সদস্য গ্যালারিতে বাকেট চেয়ার বসাতে প্রায় পুরো খরচ দিয়েছেন। মে দিবসের ছুটিতে ওই দুই জন ইস্তফা দেন কিনা তা নিয়েই কৌতুহল থাকবে।
No comments:
Post a Comment