আই এস এলে খেলতে শর্ত চাপালো কলকাতার দুই প্রধান। প্রথম শর্ত, কলকাতার বাইরে গিয়ে তারা আই এস এলের ম্যাচ খেলবে না। দ্বিতীয়ত, আই এস এলে খেলতে যে পরিমাণ ফ্রাঞ্চাইজি অর্থ চাওয়া হয়েছে, সেই ১৫কোটি টাকা দেবে না তারা।
এই শর্ত দুই নামী ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল প্রথমদিন থেকেই বলে এসেছে। এটা নতুন কিছু নয়, তবে শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবুতে সন্ধ্যায় কর্মসমিতির সভায় এই সিদ্ধান্তের ওপর সিলমোহর পড়লো। মোহনবাগান এখনও এই সংক্রান্ত বিষয়ে ক্লাবে কোনও সভা ডাকেনি। কিন্তু তাদের প্রতিনিধিও লাল হলুদের দুই শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে ২২শে মে সভা করবেন ফেডারেশন সচিব কুশল দাসের সঙ্গে। ওই বৈঠকে দুই ক্লাবের মোদ্দা কথা এক, কলকাতার বাইরে তারা বিনোদনী লিগের কোনও ম্যাচ খেলতে যাবেন না। এই নিয়ে ফেডারেশন সচিবকে কলকাতার কর্তারা বলবেন। তারমধ্যে আবার মোহনবাগানও এদিন বিকেলের পর ফেডারেশন সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে সবুজ মেরুন সচিব অঞ্জন মিত্র লিখেছেন, মোহনবাগান ১২৫বছরের পুরানো ঐতিহ্যশালী ক্লাব, তারা কেন আই এস এলে খেলতে ফ্রাঞ্চাইজি অর্থ ১৫কোটি টাকা দেবে? তাতে আরও লেখা হয়েছে, মোহনবাগানের সঙ্গে যদি রিলায়েন্স আই এম জি-র কর্তারা দুই-তিনবছর খেলা ক্লাবগুলিকে মিলিয়ে ফেলেন, সেটি তাদের অযোগ্যতা। ইস্টবেঙ্গল আবার এই সভায় নিয়ে যাচ্ছে ইউ বি স্পনসরের প্রতিনিধি অমিত সেনকেও।
সবথেকে বড় কথা, কলকাতার দুই নামী ক্লাবই আই এস এলে খেলতে চাইছে। কিন্তু তাতে যদি ক্লাবের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়, এমনকিছু তারা করবেন না। সবথেকে বড় কথা, এই লিগে খেলতে গেলে আই এম জি আরের কাছে মাথা বিকিয়ে দিতে হবে, এমন অশনিসংকেত পাওয়ার পরেও তাদের খেলতে হচ্ছে। মূলত দুটি কারণে। এক, ফুটবলের মূল ধারায় থাকতে গেলে আই এস এলে খেলতে হবে, এমন কথা ভাবছেন কর্তারা। দ্বিতীয়ত, ক্লাবগুলির স্পনসরদের চাপ রয়েছে। তারা যদি ক্লাবগুলিকে খেলতে বলে তা হলে সমর্থকদের আবেগ সেখানে স্থান পায় না। এমনকি সেক্ষেত্রে যদি ক্লাবের লোগো ও নাম ওলটপালট হয়ে যায়, তাতেও কী কিছু যায় আসবে না! এমনকি এর আগে সবুজ মেরুনের এক শীর্ষ কর্তা আই এস এলকে রীতিমতো বুজরুকি ফুটবল বলে এও জানান এটি নিতান্তই ‘সার্কাস’। তারপরেও কিভাবে বাণিজ্যিক এক ব্যর্থ লিগে তারা খেলতে নামার মনোবাসনা দেখান, সেটিও অবাক করার মতো বিষয়।
ভারতীয় ফুটবলে অবশ্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কোনও গুরুত্ব নেই। তাদের নিজস্ব কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। রিলায়েন্স আই এম জি কর্তারা যা বলছেন, ঠিক সেটাই করছেন সভাপতি প্রফুল প্যাটেল। তিনি বাহরিন যাওয়ার আগে কলকাতার দুই প্রধানের কর্তাদের বলে গেলেন আই লিগই দেশের একনম্বর টুর্নামেন্ট। আর এ এফ সি কংগ্রেসে গিয়ে আই এস এলের পক্ষে নানা সওয়াল করেছেন। এমনকি ফেডারেশন সভাপতি ‘শিখণ্ডী’ হিসাবে রেখেছেন সচিব কুশল দাসকে, যাঁর মতামত শোনা ছাড়া কোনও ভূমিকা নেই। তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে আদৌ কিছু হবে কিনা, সেটি নিয়েও সমান গুঞ্জন। কারণ তিনি দুই প্রধানের কর্তাদের থেকে বক্তব্য শুনে সভাপতিকে জানাবেন। সভাপতি আবার রিলায়েন্স কর্তাদের দিকে চেয়ে থাকবেন আসল সিদ্ধান্তের জন্য। তাই বিষয়টি সহজ হওয়া দূর অস্ত, আরও জটিল হয়ে গিয়ে বাংলার ফুটবলকেই প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment