লেট নাইট শো-তে এল মুম্বই টিকিট | আনন্দবাজার পত্রিকা - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

লেট নাইট শো-তে এল মুম্বই টিকিট | আনন্দবাজার পত্রিকা

Share This

বেঙ্গালুরু শহরে নাকি রাত নামে না। বুধবার মধ্যরাতে সেটাই আর একবার প্রমাণ করে দিলেন এ শহরের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আর গ্যালারিতে তাঁদের নিশিযাপনকে কুর্নিশ জানালেন গৌতম গম্ভীর, তাঁর ব্যাট দিয়ে।

বৃষ্টি ও চিন্নাস্বামীর অত্যাধুনিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এই দুইয়ের মধ্যে যখন লড়াই তুঙ্গে, তখন বুধবার মাঝরাতে গত বারের চ্যাম্পিয়ন সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে সাত উইকেটে হারিয়ে শেষ হাসি হাসলেন গম্ভীর, শাহরুখ খানরা। তখন রাত প্রায় দেড়টা।
ফাইনালের আগে এ বার শেষ ও কঠিন ধাপটা টপকাতে হবে শুক্রবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে। তার পরেই হায়দরাবাদ যাওয়ার টিকিট পাবেন গম্ভীররা। 

ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে বারোটা। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের মাঠে চলছিল তিনটে সুপার সপার। ডজন খানেক শতরঞ্চি দিয়ে চলছে মাঠের উপরের অংশের জল শুকনোর কাজ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত চিন্নাস্বামীর গ্যালারিতে তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে দর্শকরা।

আম্পায়াররা যখন জানিয়ে দিলেন সানরাইজার্সের ১২৮-৭-এর জবাবে কেকেআর-কে জেতার জন্য ছ’ওভারে ৪৮ রান করতে হবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে, তখন ঘড়িতে রাত পৌনে একটা। সন্ধে থেকে গ্যালারিতে এসে বসে ছিলেন নাইটদের ‘ডন’ শাহরুখ খান। জায়ান্টস্ক্রিনে মাঝে মাঝেই তাঁর থমথমে মুখটা ভেসে উঠছিল। নাইটদের ইনিংস ওপেন করতে যখন রাত ১২.৫৫-য় নামলেন রবিন উথাপ্পা ও ক্রিস লিন, তখনও তার অভিব্যক্তি থেকে সেই উৎকন্ঠা যায়নি।
যে ক্রিস লিন ন’দিন আগেই এই মাঠে ব্যাটে ঝড় বইয়ে গিয়েছেন, সেই তিনি ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম ওভারেই পয়েন্টের উপর দিয়ে ছয় হাঁকানোর পর নমন ওঝার গ্লাভসে বল জমা দিয়ে ফিরে যান। তিনে নেমে ইউসুফ পাঠানও রান আউট। 
গৌতম গম্ভীর ক্রিজে এসেই পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান। ক্রিস জর্ডনকে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় হাঁকাতে গিয়ে শিখর ধবনের হাতে ধরা পড়ে ফিরে গেলেন উথাপ্পা। গম্ভীর মুখে ঠায় দাঁড়িয়ে দলের ব্যাটসম্যানদের আত্মসমর্পণ দেখছিলেন শাহরুখ। পাওয়ার প্লে-র দুই ওভারে কেকেআর ২১-৩। গ্যালারিতে রব উঠল ‘কে..কে..আর, কে..কে..আর’।


মন্থর উইকেটে রশিদ খানের ঘূর্ণি বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, এমন ধারণাই ছিল গম্ভীরদের। তাই তাঁকে চার-ছয় হাকানোর ঝুঁকি নিলেন না। তবু ছ’টা খুচরো রান নিয়ে নিলেন।
তিন ওভারের শেষে কেকেআরের দরকার ১৮ বলে ২১। গম্ভীরই নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে নিলেন সিদ্ধার্থ কউলকে পরপর দু’বলে একটা চার ও একটা ছয় হাঁকিয়ে। যে ওভারের পর কেকেআরের লক্ষ্য দাঁড়ায় দু’ওভারে সাত রান। এ তো গম্ভীরের মতো পোড় খাওয়া ব্যাটসম্যানের কাছে এক প্লেট পাস্তা শেষ করার মতোই সহজ।
আইপিএলের আগেই সোয়া চার কোটি টাকা খরচ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা বসিয়েছে কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থা। বুধবারই তার খেল দেখাল এই নতুন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা ‘সাবএয়ার’। বৃষ্টি শুরু হলেই এর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র মিনিটে দশ হাজার লিটার জল শুকিয়ে ফেলতে পারে তার ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির মাধ্যমে। এই প্রযুক্তিকেই এ দিন ধন্যবাদ দেওয়া উচিত নাইটদের। আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টির পর যে ভাবে দ্রুত খেলা শুরু করে দেওয়া হল, তার জবাব নেই।
একবার বৃষ্টি বন্ধ হয় তো আবার চালু। শাহরুখ যেন নিজের চোখেই বাস্তবের ‘কভি হাঁ কভি না’ দেখে নিলেন চিন্নাস্বামীর গ্যালারিতে বসে। 
বিকেলে বৃষ্টির অত্যাচার সামলে ম্যাচ ঠিক সময়েই শুরু হলেও চিন্নাস্বামীর যুদ্ধের শুরুটা দেখে কেকেআরের একপেশে জয়ের ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছিল। গৌতম গম্ভীরের দলে চার-চারটে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত, ২০১২-তে শেষ আইপিএল খেলা ইশাঙ্ক জাগ্গিকে প্রথম এগারোয় রাখার ফাটকা লেগে যাওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া যায় ম্যাচের প্রথম ঘণ্টাতেই। ডেভিড ওয়ার্নার যখন পীযূষ চাওলার বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে যান, তখন থেকেই নাইটরা জয়ের কথা ভাবতে শুরু করে দেন।
পনেরো ওভারেও একশোয় পৌঁছতে পারেনি গত বারের চ্যাম্পিয়নরা। মন্থর উইকেটে এমনিতেই বল ব্যাটে আসছিল না। তার উপর নাইটদের দম বন্ধ করা বোলিং। আঙুলের চোট সারিয়ে ফিরে আসা যুবরাজ সিংহকেও আটকে দেন উমেশ যাদব, কুল্টার নাইল, সুনীল নারাইন, পীযূষ চাওলারা। সানরাইজার্সের ইনিংসের শেষ ওভারেই চিন্নাস্বামীতে আছড়ে পড়ে ঝড়। তার পর থেকেই সীমাহীন উদ্বেগ পর্ব শুরু নাইটদের শিবিরে। যা শেষ হয় রাত ১.২৭-এ নাইটদের জয় সম্পন্ন হতেই।
কুম্বলেকে চিঠি হরভজনের: আপাতত জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন তিনি। ব্যস্ত ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভাল মতো জেনেছেন হরভজন সিংহ। আর সে জন্যই এক সময়ের সতীর্থকে চিঠি লিখে একটা আবেদন জানিয়েছেন হরভজন। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বাড়ানোর জন্য। অফস্পিনার লিখেছেন, ‘‘গত দু’-তিন বছর ধরে আমি র়ঞ্জি খেলছি। আমি দেখেছি, সতীর্থ ক্রিকেটারদের কী রকম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অথচ রঞ্জি ট্রফি পরিচালনা করছে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম ধনী বোর্ড। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, এই ম্যাচ ফি-র ব্যাপারটা নিয়ে তুমি বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে কথা বলো। প্রয়োজন পড়লে সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণ, বীরু-র সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা করা হোক।’’

No comments:

Post a Comment

Pages