রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে দুটো গোল অফসাইড! - সুভাষ ভৌমিক | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে দুটো গোল অফসাইড! - সুভাষ ভৌমিক | আজকাল

Share This
রিয়েল মাদ্রিদ ৪
রোনাল্ডো (‌‌৩)‌‌, অ্যাসেনসিও 
বায়ার্ন মিউনিখ ২ 
লেওয়ানডস্কি, র‌্যামোস (‌‌আত্মঘাতী)‌
(দুই লেগ মিলিয়ে ৬-‌৩)‌‌


মঙ্গল–রাত নাড়ির গতি বাড়ানো, রুদ্ধশ্বাস ফুটবলের সাক্ষী রইল। এই ম্যাচের নির্যাস হতে পারত ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকসহ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শততম গোল। হতে পারত রিয়েল মাদ্রিদের টানা সাতবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছনোর রেকর্ড। হতে পারত উপভোগ্য ম্যাচ নিয়ে চর্চা। কিন্তু তা না হয়ে, প্রশ্ন তুলে গেল ম্যাচ পরিচালনা!‌ 

রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ—দু’‌দলই কৃতিত্ব দাবি করতে পারে এমন রাত উপহার দেওয়ার জন্য। তা–‌ও আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না বিজয়ী রিয়েলের লাক সঙ্গ দিয়েছে, রেফারির ভুলে বা বদান্যতায়। হাঙ্গেরির রেফারি ভিক্টর কাসাই এবং তাঁর সহযোগী লাইন্সম্যানের ভুলে বলি হল বায়ার্ন। একটা নয়, তিন–তিনটি ভুল। এক, ৮৪ মিনিটে ভিদালের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। ওর অসাধারণ স্লাইডিং ট্যাকেল। বলেই পা ছুঁয়েছিল। তা–‌ও ওকে হলুদ কার্ড দেখালেন রেফারি কাসাই!‌ দ্বিতীয় আর তৃতীয় ভুল, অতিরিক্ত সময়ে রোনাল্ডোর দুটো গোলই অফসাইড!‌ তাই এমন উত্তেজক ম্যাচ, যে ম্যাচের প্রথম মুহূর্ত থেকেই রিয়েল দাপট দেখিয়েছে, যে ম্যাচে বায়ার্ন ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে এবং দ্বিতীয়ার্ধে এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যাতে মনে হতে বাধ্য, বায়ার্ন বার্নাব্যুতে রিয়েলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে, সেই ম্যাচের, সেই গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটল এমন করুণভাবে!‌ মাঠে যাঁরা বসেছিলেন, টেলিভিশনের সামনে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরা দেখলেন, এমন ম্যাচ শেষ হল বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। অথচ দুই ফুটবল দৈত্য এ বলছে আমায় দেখ, ও বলছে আমায়— এই ব্যাপারটা কিন্তু গোটা ম্যাচেই ছিল সারাক্ষণ। ১০৯ মিনিট পর্যন্ত উত্তেজনা ছিল চরমে। 
বায়ার্ন বেরিয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে। এর জবাব নেই। তাই তো খেলার পর কার্লো আনসেলোত্তি বলেছেন, ‘‌আমাদের আরও কিছু প্রাপ্য ছিল। আমরা খুশি নই। এই ধরনের ম্যাচে কেমন রেফারিং হবে?‌ আমি জানি না। এমন ম্যাচে ভিডিও টেকনোলজি দরকার।’‌ সত্যিই। ভিদাল তো বলে পা রেখেছিল। তা–‌ও হলুদ কার্ড!‌ জিদান এ নিয়ে একটাও কথা বলেনি। 
কিন্তু এর বাইরে বেরোলে আমরা কী দেখব?‌ দু’‌দলই প্রচুর পাস খেলেছে। রিয়েল ৫২৪, বায়ার্ন ৫৬৩!‌ দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের কর্তৃত্ব বায়ার্নের হাতে ছিল। রিয়েল এই কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেয় ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে বায়ার্ন যে গতিতে, যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আক্রমণ শানাচ্ছিল তাতে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দলকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দর্শকদের বলতে বাধ্য হয়েছে মার্সেলো। 
রিয়েল এক ধাপ এগোল। কিন্তু বায়ার্ন এক ধাপ পেছল, একথা বলা যাবে না। মানছি, রিয়েল সব খেলায় গোল করছে। আবার গোল হজমও তো করছে। সব ধরনের খেলাতেই বলা হয় কথাটা, চ্যাম্পিয়ন্স লাক। বায়ার্নের প্রথম গোলের পর রবেনের সেন্টার থেকে ভিদালের শট বারের ওপর দিয়ে একটুর জন্য বেরিয়ে না গেলে ব্যবধান বাড়াতে পারত আনসেলোত্তির দল। এরপরও দুটো সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে বায়ার্ন। কিন্তু এত সবের মধ্যেও রিয়েল হাল ছাড়েনি। আর ছাড়েনি বলেই রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের সুযোগে চাপ বাড়াতে পেরেছে। গোলের সুযোগ যখন রিয়েল বাড়াল, ঠিক তখনই কিন্তু আগের দিনের মতোই বায়ার্ন গোলকিপার ন্যুয়ের নিজেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেল। বায়ার্নের দুই প্রান্তকে সচল রাখার কাজটা করছিল লাম, রবেন উল্টোদিকে আলাবা আর রিবেরি। বায়ার্ন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল উইং টু উইং ডায়গোনাল চেঞ্জ ওভারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর খেলাটা ধরে নেয় রিয়েলের ক্রুজ আর মডরিচ। তারাও নিজেদের যে উচ্চতায় নিয়ে পৌঁছেছিল, তা রিয়েলকে এই জয় পেতে সাহায্য করেছে। 
কোয়ার্টার ফাইনালে দুই লেগেই জিতেছে রিয়েল। কিন্তু যে কথাটা আগেই লিখেছি, সেটাই আবার বলতে হচ্ছে, ফুটবলকে সমৃদ্ধ করে যা, ফুটবল দাবি করে যা, সেই গতি, পাসিংয়ের পরিচয় মিলেছে এই ম্যাচে। 
আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। যে প্রথমে পারছিল না। কিন্তু জিদান বেনজিমাকে বসিয়ে ওকে ভেতরে নিয়ে যেতেই, রোনাল্ডো নিজেকে মেলে ধরল। 
একটা কথা শেষে বলতেই হচ্ছে। যে গতিতে ৯৪ ‌মিনিট বায়ার্ন দৌড়েছে, তারপর অতিরিক্ত সময়ে দশজন হয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল ওরা ক্লান্ত হতে শুরু করেছে। 
আবারও ফিরে যাচ্ছি প্রথমের কথায়। বিরল মঙ্গল‌–রাত সাক্ষী রইল এমন এক ফুটবলের, যে ফুটবল রোজ রোজ খেলা হলে, অন্য খেলা আর দেখত না কেউ। এই ধরনের উত্তেজনায় ভরা খেলায় কাউকে ফেবারিট বাছা যায় না। তাই মনে হচ্ছে, ম্যাচটার মীমাংসা টাইব্রেকারে হলেই ভাল হত। সঠিক বিচার হত। ‌‌‌

No comments:

Post a Comment

Pages