সেই সনির ম্যাজিকেই বাজিমাত - সৌমিত্র কুমার রায় | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

সেই সনির ম্যাজিকেই বাজিমাত - সৌমিত্র কুমার রায় | আজকাল

Share This
মোহনবাগান ১ (নর্ডি)    মিনার্ভা: ০


ম্যাচের শুরুতে মিনার্ভার সমর্থকরা গ্যালারিতে ভাংড়া নাচছিলেন। কিন্তু ৯০ মিনিট শেষে সনি নর্ডির দৌলতে গ্যালারিতে পাল্টা ভাংড়া নাচ ফিরিয়ে দিলেন বাগান সমর্থকরা। ৮৩ মিনিটে সনির গোলেই ১৬ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে শীর্ষে রইল সঞ্জয় ব্রিগেড।

আইজল–চার্চিল ম্যাচের স্কোরটা দেখে মাঠে নেমেছিল মোহনবাগান। খালিদ জামিলের দল ৩–১ জেতে। সে কারণেই কি শুরু থেকেই চাপে পড়ে গিয়েছিল সঞ্জয়ের দল? প্রথমার্ধে দলের খেলায় সেই ছাপ স্পষ্ট। মিনার্ভার বিরুদ্ধে তেমন গোলের সুযোগই তৈরি হল না প্রথম ৪৫ মিনিট। শুধু কী চাপ, ক্লান্তিও ছিল। লাজং থেকে লুধিয়ানা প্রায় ১৪ ঘণ্টার যাত্রা।
প্রথমার্ধে অন্তত বাগানের আক্রমণ তেমন দানা বাঁধছিল না। রাইট উইংয়ে এ দিন শুরু থেকে সঞ্জয় নামিয়ে দেন বেঙ্গালুরু ম্যাচে মিনিট তিনেক খেলা পিন্টু মাহাতোকে। ডান প্রান্ত বরাবর তেমন আক্রমণ দেখা যাচ্ছিল না। ২৪ মিনিটে পিন্টুর জায়গায় নামেন প্রবীর দাস। তাও সবুজ–মেরুনের রাইট উইং ভোঁতা লাগছিল। 
রাইট উইং নয়, গোটা দল শুরু থেকেই ছন্দে ছিল না। ডাফি, জেজেরা গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছিল। অপরদিকে, প্রতি–আক্রমণে প্রতিপক্ষ চাপ তৈরি করছিল। টিভি সম্প্রচারে স্পষ্ট শোনা যায়, সঞ্জয় দলকে নির্দেশ দিচ্ছেন—‘ওদের কাউন্টার অ্যাটাকে অ্যালার্ট থাকো।’ ২৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল মিনার্ভা। তাতে লাভ কিছু হয়নি।
অন্যদিকে, লুধিয়ানার গুরু নানক স্টেডিয়াম বাগানের গতিময় ফুটবলে অন্তরায় হয়ে দঁাড়াচ্ছিল। মাঠের অসমান বাউন্স। কোনও কোনও জায়গায় ঘাসের সবুজ উড়ে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। ফুটবলাররা বলে শট নেওয়ার সময় মাটি উঠে আসছিল। এহেন বিশ্রী মাঠের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ দিন প্রথমার্ধে বাগানের খেলাও বিবর্ণ। কয়েকটা সুযোগ এলেও তা থেকে গোল হওয়ার মত নয়। ২০ মিনিটে সনির ফ্রি–কিক থেকে এডুর হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। তার আগে রাইট ব্যাক কোটাল দারুণ একটা হেড নিলেও গোল হয়নি।
মিনার্ভার ফুটবলাররা মরিয়া লড়াই চালাচ্ছিলেন। সেই জায়াগায় শেহনাজ, কাৎসুমিদের মিস পাস। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ ভাগে বলের যোগানের অভাব। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্লাড লাইটের জন্য মিনিট ২০ খেলা বন্ধ থাকে। তারপর খেলা শুরু হতেই প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন মিনার্ভার সিমরানজিৎ সিং। একটা টার্নে গায়ে সেঁটে থাকা প্রবীরকে ছিটকে দিয়ে শট নিলে তা বারপোস্টে লেগে ফেরে।
গুরু নানক স্টেডিয়ামের একটা দিকের ফ্লাড লাইট বন্ধ থাকায় মিনিট চারেক দেরিতে খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয়ার্ধেও মিনিট ছয় খেলা হওয়ার পর আবার ২০ মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ থাকে। দ্বিতীয়ার্ধেও সঞ্জয়–ব্রিগেডের ছন্নছাড়া খেলা চলতেই থাকে। সঞ্জয়ের ছেলেদের দেখে মনে হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ের ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচ নয়, যেন টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে। ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব বোধহয় খুব অবাক করে দিচ্ছিল বাগান সমর্থকদের। কারও বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এই মিনার্ভাকে রবীন্দ্র সরোবরে ৪–০ হারিয়েছিল বাগান! 
আর সনি নর্ডি? বাগান টিমের ‘মুশকিল আসান’ যতটা পারলেন চেষ্টা করলেন। কিন্তু তঁাকে ডাবল কভারিংয়ে রেখে দিয়েছিল মিনার্ভার ফুটবলাররা। বেশ কয়েকবার বল নিয়ে গোলের কাছে পৌঁছে গেলেও সাপোর্ট পাচ্ছিলেন না। দিনের শেষে বাজিমাৎ করেন সেই হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ান। এ দিন শুরু থেকেই ডাফির পাশে খেলছিলেন জেজে। কিন্তু তঁাকে খুঁজে পাওয়া গেল কই? প্রশ্ন থাকবেই। ৬০ মিনিটে বঁা দিক থেকে দু’জনকে কাটিয়ে বল টেনে নিয়ে গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন সনি। তঁার শট রুখে দেন বিপক্ষ গোলরক্ষক। মিনিট দুই পরে িমনার্ভার করিম ওমোলোজা একটা সহজ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। দেবজিৎ গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিপদ মুক্ত করেন। বাগান ডিফেন্ডাররা এ দিন আত্মবিশ্বাসের অভাবে কেন ভুগছিলেন, উত্তর খঁুজছেন সমর্থকরা।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে প্রবীরকে তুলে বলবন্তকে নামিয়ে অল–আউট যাওয়ার চেষ্টা করেন সঞ্জয়। তখন কাৎসুমি রাইট উইংয়ে চলে যান। সেইসময় মিনার্ভার ওপর বাগান চাপ তৈরি করছিল। ৭২ মিনিটে কাৎসুমির শট গোল লাইন সেভ হয়। ৮০ মিনিটে সনির কর্নার থেকে ডাফির হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। গোল না আসায় রক্তচাপ বাড়ছিল সঞ্জয়ের। তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ সনি। কাউন্টার অ্যাটাকে একটা লুজ বল পেয়ে গিয়েছিলেন। তা ধরে সনির দৌড়। বিপক্ষ বক্সে কেউ নেই, মিনার্ভা গোলরক্ষক এগিয়ে এলে ঠান্ডা মাথায় সুন্দরভাবে জালে জড়ান।
গ্যালারিতে বিপক্ষের সমর্থকদের ঝোলানো ফ্ল্যাগে লেখা ছিল– ‘সিং ইজ কিং।’ ম্যাচের পর তা বদলে বোধহয় হয়ে গেল ‘‌‌নর্ডি ইজ কিং।’
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, আনাস, এডু, রাজু, পিন্টু (প্রবীর, বলবন্ত), শেহনাজ, কাৎসুমি, নর্ডি, জেজে, ডাফি‌।

No comments:

Post a Comment

Pages