দশ দিনের মধ্যে বকেয়া পাবেন ফুটবলাররা
নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: মোহন বাগান ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্ট বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী আগামী দশ দিনের মধ্যে দিয়ে দেবে। মোহন বাগানের চরম আর্থিক সংকট নিরসনে গত শুক্রবার কর্মসমিতি একটি ফিনান্স কমিটি গঠন করে দেয়। এই ফিনান্স কমিটির দায়িত্ব স্রেফ ২০১৭-১৮ মরশুমে ফুটবল বাজেট সম্পর্কিত। মঙ্গলবার ফিনান্স কমিটির প্রথম সভার পর শৈলেন ঘোষ জানান,‘আমরা বিভিন্ন স্পনসরের সঙ্গে আলোচনা করছি। বর্তমান ফুটবল বিভাগের দায় মেটাতে এখনই আড়াই কোটি প্রয়োজন। এক কোটি টাকা সভাপতি নিয়েছেন সোমবার। কোম্পানি ফান্ডে হয়তো এসে যাবে। তবে আমরা সভাপতির দেওয়া অর্থকে কোনও ব্যক্তিগত অনুদান ধরছি না। নথিভুক্ত কোম্পানিতে কোনও ব্যক্তিগত অনুদান দেওয়া প্রচলিত প্রথা নয়। ওর চিঠিতে ব্যক্তিগত অনুদানের ব্যাপারটি নেই। উনি সম্মানীয় ব্যাক্তি। আমার বাবার বয়সী। ওঁর উপর সম্মান রেখেই বলছি এই এক কোটি টাকা রিপ্লের স্পনসরমানি। ’
এর স্বপক্ষে ফিনান্স কমিটির তরফে মোহন বাগানের গত মরশুমের একটি জার্সি দেখানো হয়। সেখানে নীলকমল, এম পি বিড়লা গ্রুপ আর ফ্লোজেন কোম্পানি কত অর্থ দিয়েছে তা বিস্তারিতভাবে বলে দেওয়া হয় মিডিয়াকে। ওই নথিতে ক্লাবের জেনারেল ম্যানেজারের সই ছিল। তিনি ক্লাবেই উপস্থিত ছিলেন। ফিনান্স কমিটির সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাও বলেন। তাঁর দেওয়া হিসাবে চতুর্থ স্পনসর রিপ্লের অর্থ শূন্য হিসাবে দেখানো হয়। এমনকি বাকি তিনটি স্পনসরের সঙ্গে কত টাকার চুক্তি আছে আর কত পাওয়া গিয়েছে, তার বিবরণ দেওয়া হয়। রিপ্লের সঙ্গে কত টাকার চুক্তি আছে তা জেনারেল ম্যানেজারের নথিতে লেখা নেই। মোহন বাগান সচিব গত দেড় মাস আগেই বলেছিলেন,‘রিপ্লের চুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই লিখিতভাবে ওদের কাছে কোনও অর্থ চাইতে পারছি না।’ এদিন জেনারেল ম্যানেজারের সই করে দেওয়া নথিতে সেই বক্তব্যই মান্যতা পেল।
সচিবের ওই বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সভাপতি। এদিন ফিনান্স কমিটির চার সদস্য বলেন,‘ সভাপতির কোম্পানি গত চার বছরে স্পনসর হিসাবে ২৮ কোটি অর্থ দিয়েছেন। কোনও ভাবেই সেটা অনুদান নয়। গত ১ আগস্ট মোহন বাগান ফুটবল ক্লাব
(ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেড গঠিত হওয়ার পর কোনও অর্থ ঢোকেনি।’ তবে এটা ঘটনা গত বছরের ১ জুলাই জিএসটি চালুর আগে পুরানো কোম্পানিতে সভাপতির দেওয়া অর্থ ঢুকেছিল। যা দিয়ে ২০১৬-১৭ মরশুমে ফুটবলারদের বকেয়া পেমেন্ট মিটিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে দুটি কোম্পানি সমানভাবে চলায় মোহন বাগানের জট আরও বেড়েছে। সেই জন্য মোহন বাগান এসি এবং দুটি কোম্পানির অ্যাকাউন্টস স্পেশাল অডিট করা হবে বলে জানান ফিনান্স কমিটির চার সদস্য। যা প্রায় শোরগোল ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা। কারণ মোহন বাগানের অডিটেড অ্যাকাউন্টসে সচিবও বাকি তিন স্বাক্ষরকারী হিসাবে সই করেছেন। তবুও এই স্পেশাল অডিটের প্রয়োজন কেন? এই ব্যাপারে ফিনান্স কমিটির সদস্য শুভাশিস পাল জানান,‘আমরা ক্লাব অফিসে কিছু নথিপত্র চেয়েও পাচ্ছি না। সচিব সোমবার সব কাগজপত্র চেয়েছিলেন। তা তিনি পাননি। এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। শনিবার মোহন বাগান কর্মসমিতির সভা। সেখানে সচিব আরও বিস্তারিতভাবে জানাবেন।’ ফিনান্স কমিটির অভিযোগ, ‘আমরা গত মরশুমের ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বর কিংবা হোয়াটস অ্যাপ নম্বর চেয়েছিলাম। তা পাইনি।’ উল্লেখ্য, যদিও মোহন বাগান ফুটবলারদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ আছে।
সভাপতির এক কোটি ধরলেও আরও দেড় কোটির প্রয়োজন। কিন্তু নতুন মরশুমের স্পনসরমানি এসে পুরানো বছরের পেমেন্ট মেটানোর প্রয়াশ নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে মঙ্গলবারই ক্লাবে উপস্থিত ফুটবলারদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। সচিব গোষ্ঠীর অঙ্ক হল যে কোনও ভাবে আগামী চার- পাঁচ মাস ফুটবল বিভাগ চালিয়ে দেওয়া। তাতে যদি নতুন বছরের বাজেটে টান পড়ে তাতেও কোনও পরোয়া নেই। এতে নতুন নির্বাচিত কমিটি বেশ ঝামেলায় পড়বে।
সভাপতির পত্রাঘাত: ফিনান্স কমিটির সদস্যদের অভিযোগের দু’ঘন্টার মধ্যে মোহন বাগান সচিবকে পত্রাঘাত করলেন পদত্যাগী সভাপতি। সচিবকে ই-মেল পাঠিয়ে তিনি লেখেন, ‘মঙ্গলবার ক্লাব তাঁবুতে কর্মসমিতির তিন-চারজন সদস্য আমার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ক্লাবকে সার্ভিস দেওয়ার পর এই অভিযোগে আমি মর্মাহত। আমি এক কোটি টাকা ব্যক্তিগত অনুদান হিসেবে দিয়েছি। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে অবিলম্বে ফুটবলারদের পেমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
No comments:
Post a Comment