বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - দিদি | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - দিদি | দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত

Share This

কিছু মানুষ থাকে, যারা চিরকাল নীরবে তাঁদের কাজটি বৈশিষ্টের সাথে করে যান। তাঁরা হন নম্র ও লাজুক স্বভাবের, তাঁদের মধ্যে থাকে না কোনও উচ্চাশা। ফলে প্রচারের আলো কখনই তাঁদের ওপর পরে না। শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময় মনে পরে তাঁদের। কারণ তাঁদের কাজ রক্ষা করা, নায়ক হওয়া নয়। এরকমই একজন মানুষের কথা আজ বলব। তাঁর নাম Waldyr Pereira। ডাকনাম Didi। 

তাঁর অসাধারণ দক্ষতার কথা কারোর অজানা নয়। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে পেলে বা Garrincha র নামের আড়ালে তাঁর নামটি ঢাকা মাঝে মাঝে ঢাকা পরে যায়। জীবনের প্রতিটি পদে লড়াই করে দক্ষতা এবং নৈপুণ্যের শীর্ষে পৌছনো এই মানুষটির কৃতিত্ব তাঁর দেশের সাফল্যের ক্ষেত্রে কারোর চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে বলা চলে মাঠের ভিতরকার নেপথ্য নায়ক তিনিই। যেমন অসাধারণ গোল করার মুন্সিয়ানা ছিল তাঁর, তেমনি দলের প্রয়োজনে মাঝমাঠে নেমে এসে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতেও তাঁর জুরি মেলা ভার। 

জন্ম ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ই অক্টোবর Campos এ। তাঁর শৈশব কেটেছে প্রবল দারিদ্র্যের মাঝে। একটা সময় পথের ধারে মটর শুটি বিক্রি করে পেট চালাতে হয়েছিল তাঁকে। তখন তাঁর খুব ই অল্প বয়স। সেইসময় থেকেই রাস্তায় রাস্তায় ফুটবল খেলে বেড়াতেন খেলাটির প্রতি প্রবল ভালবাসার টানে। কিন্তু সমস্যা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। যখন তাঁর ১৪ বছর বয়স, তখন সংক্রমণের জেরে তাঁর ডান পা টি কাটা যাবার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু অসাধারণ মনের জোরে তিনি ফিরে আসেন এবং অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করে বিশ্ব ফুটবলে নিজের সম্মান আদায় করে নেন। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে মেক্সিকো ও যুগোস্লাভিয়ার সাথে দুটি অসাধারণ গোল করে ব্রাজিল কে জেতান কিন্তু রানার্স হাঙ্গারির কাছে পরাজিত হয় ব্রাজিল তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা স্বত্ত্বেও। 

১৯৫৮ বিশ্বকাপ বলা চলে তাঁর ফুটবল জীবনের সেরা অধ্যায়। পেলে, Garrincha, ভাভা র মত খেলোয়াড় কে সাথে নিয়ে অসামান্য ফুটবলের নমুনা প্রদর্শন করে সারা বিশ্বের মন জয় করে নেন। সেই বিশ্বকাপে জেতেন সেরা ফুটবলারের শিরোপা। এরপর ১৯৬২ বিশ্বকাপেও দুর্ধর্ষ ফুটবল খেলে ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ মসৃণ করেন। সেই বিশ্বকাপে পেলের মত ফুটবলার আহত হওয়া স্বত্ত্বেও মুলত তাঁর ও Garrincha র দাপটে সেই অভাব বোঝাই যায় নি। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দুটি বিশ্বকাপ ছাড়াও Copa Oswaldo Cruz কাপ জিতেছেন ৪ বার, O'Higgins Cup জিতেছেন ২ বার ও ১ বার করে Pan American Games ও Atlantic Cup জিতেছেন। শুধু দেশের হয়েই নয়। ক্লাব ফুটবলেও বহু সাফল্য পেয়েছেন। Botafogo র হয়ে Campeonato Carioca জিতেছেন ৩ বার, Torneio Rio – São Paulo জিতেছেন ১ বার, State Championship ও Tournament Home জিতেছেন ৩ বার করে, ১ বার করে জিতেছেন Colombia International Tournament ও Pentagonal Club of Mexico খেতাব। এছাড়াও Fluminense এর হয়ে একবার করে Copa Rio ও State Championship খেতাব জিতেছেন। স্পেনের অন্যতম সফল ক্লাব দল Real Madrid এর হয়েও একবার করে European Cup ও Ramon de Carranza Trophy জিতেছেন। 

কিন্তু শুধু পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তাঁকে মাপা বোধহয় ঠিক নয়। দেশের জার্সি তে ৬৮ টি খেলাতে ২০ টি গোল করা ছাড়াও ফুটবলে অনেক বড় ভুমিকা পালন করেছেন তিনি। আধুনিক যুগের বানানা Freekick এর প্রবক্তা যে তিনিই। এমন একটি Free kick তিনি আবিষ্কার করেন যা দেখে তাবড় ফুটবল বোদ্ধা দের চোখে তাক লেগে যায়। Penalty Box এর ঠিক বাইরে থেকে হিউম্যান ওয়ালের অনেকটা ওপর দিয়ে অনেকটা বাঁক খেয়ে নিচু হয়ে যা গোলে ঢোকে। তখনকার দিনে যার নামকরণ করা হয় folha seca (dry leaf) free kick । পেলের মত খেলোয়াড় তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, “He invented a lot of important moves, like the dry leaf and the three-toe pass. Not only that, he was very important for me in 1958. I was only 17 and he was like an elder brother. For him, playing football was as easy as peeling an orange." "Football is the beautiful game" , 

এই অমর উক্তিটি তিনিই প্রথম করেছিলেন। বারবার ব্রাজিলের প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠেছেন তিনি। পরবর্তীকালে কোচ হিসেবেও একাধিক সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তবুও বলা চলে একরকম প্রচারের আড়ালেই রয়ে গেছেন। এটা ঠিক, যে পেলের মতন অসাধারণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় এবং Garrincha র মতন সৃষ্টিশীল বল player খুব কম ই জন্মেছেন। তাঁদের কেউ ছোট করছে না। কিন্তু তাই বলে আমরা যেন ডিডির দক্ষতা বা কৃতিত্ব কে অবহেলা না করি। ১২ ই মে, ২০০১ এ তিনি পরলোকগমন করেন।

No comments:

Post a Comment

Pages