অনুগামীদের হঠাৎ বিক্ষোভে বিড়ম্বনায় সিএবি প্রেসিডেন্ট | বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

অনুগামীদের হঠাৎ বিক্ষোভে বিড়ম্বনায় সিএবি প্রেসিডেন্ট | বর্তমান

Share This

আইপিএল টিকিট কালোবাজারি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ঝামেলা




নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: শনিবার বিকেলে কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে এক অভিনব, নজিরবিহীন সাংবাদিক সম্মেলনের সাক্ষী থাকলেন স্থানীয় মিডিয়া। শনিবার বিকেলে কলকাতা সিটিজেন্স ফোরামের পক্ষ থেকে আইপিএলে ইডেনের ম্যাচগুলির টিকিট বিক্রির অস্বচ্ছতা নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ময়দানের বেশ কিছু চেনা মুখ। এঁদের মধ্যে ছিলেন সিএবি’র প্রাক্তন এক সহ সচিব। প্রথম চার- পাঁচটি আইপিএলে তিনি কেকেআরের অন্যতম কর্তাও ছিলেন। তখন তাঁর অফিসে কলকাতা পুলিশ বাড়তি টিকিটের খোঁজে ‘ছাপ্পা’ মেরেছিল। অপরজন ফুটবল মহলের পরিচিত এজেন্ট। নিকট অতীতে তিনি পেলে এবং মারাদোনাকে কলকাতায় এনেছিলেন। মারাদোনার সই করা জার্সি ‘উপহার’ দেন সিএবি সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকে। ক্রমে ঘনিষ্টতা বাড়ে। আইপিএলে তাঁর হঠাৎ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড হওয়া নিয়ে গত এক মাস ধরেই বিতর্ক চলছে।

সাংবাদিক সম্মেলন শুরুর আগে কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে তথাকথিত সৌরভ অনুগামীদের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে তাঁদের অভিপ্রায় প্রথমে উপস্থিত সাংবাদিকরাও বুঝতে পারেননি। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে সোমা গুহ এবং আশিস হালদার book my show (এই সংস্থাটি ইডেনে কেকেআর ম্যাচের অন লাইন টিকিট বিক্রির দায়িত্বে আছে) এর এক প্রেস ডেলিভারির একটি রিসিট দেখিয়ে বলেন,‘ইন্টারনেটে ওই সংস্থায় লগ অন করলে ইডেনের টিকিট ‘অল সোল্ড’ দেখাচ্ছে। অথচ ঘুর পথে ওই টাকার টিকিট সিএবি’র কর্তা-ব্যক্তিদের হাতে চলে যাচ্ছে। এই রিসিটে দেখা যাচ্ছে ওই টিকিট বন্টনকারী সংস্থার তরফে ইডেনের ‘ই’ ব্লকে ৫০০ টাকার ৫০টি টিকিট সিএবি’র সিইও রাহুল পোদ্দারকে দেওয়া হয়েছে জনৈক ‘দেবুদাকে’ দেওয়ার জন্য। আর এই দেবুদা হলেন ইডেনের গ্রাউন্ড কমিটির মেম্বার। তাই জনসাধারণের টিকিট ঘুরপথে সিএবি শীর্ষ কর্তাদের কাছে চলে যাচ্ছে। এই সময়ে ওই দুই ধিকৃত কর্তার অনুগামীরা পোডিয়ামে উপস্থিত সিটিজেন্স ফোরামের প্রতিনিধিদের সাংবাদিকদের ‘ঢঙে’ পালটা প্রশ্ন করতে শুরু করেন। ভিড়ের মধ্যে প্রশ্ন করতে শোনা যায় ‘দেবুদা’ মানে যে গ্রাউন্ড কমিটির সদস্য তা আপনাদের কে বলল? এভাবে বাংলার গর্ব সৌরভ গাঙ্গুলির ইমেজকে কলুষিত করবেন না।

সিটিজেন্স ফোরামের প্রতিনিধিরা ময়দানের আগমার্কা লোক না। তার মধ্যে ৪০-৫০ ‘তথাকথিত সৌরভপ্রেমী’ তীব্র হইচই ও তির্যক উক্তির মধ্যে (মহিলা প্রতিনিধিটিকে অশালীনভাবে তীব্র আক্রমণ করা হয়) তাঁরা নার্ভাস হয়ে পড়েন। এই সময়ে ‘আসল’ সাংবাদিকরা গর্জে ওঠেন। বহিরাগতদের তাঁরা ক্লাবের চত্ত্বর ছেড়ে যেতে বলেন। তুমুল হইচইয়ের মধ্যে তাঁরা লনে চলে যান। ওই দুই ধিকৃত কর্তাদের অনুগামীরা এবার সৌরভ গাঙ্গুলির নামে ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন। মহারাজের নামে ওঠে ঘন ঘন জয়ধ্বনি। প্রায় মিনিট দশেক ধরে চলে এই নাটক। সাংবাদিক সম্মেলন পণ্ড করে দেওয়াই ঩ছিল এর উদ্দেশ্য। গত দেড় বছর যে পাঁচজন কর্তাকে নিয়ে মহারাজ সিএবি’র দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাচ্ছেন তাঁর মধ্যে গ্রাউন্ড কমিটির সদস্যটি অন্যতম। ওই দুই ধিকৃত কর্তা এমনভাবে চিত্রনাট্য রচনা করেছেন যাতে মনে হবে সৌরভই ওই কর্তাকে ‘বাঁচাতে’ হয়তো তাঁদের পাঠিয়েছেন। কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়। সৌরভ এই প্রেস কনফারেন্সের কথা কিংবা এমন নাটকীয় প্রতিবাদ নিয়ে কিছুই জানতেন না। ঘটনার পর ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কলকাতার বাইরে সিএবি সভাপতি এই সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান। কিছুটা বিড়ম্বনার মধ্যেও পড়েন।

তবে সিটিজেন্স ফোরামের কর্তা-কর্ত্রীরা কিছু বেফাঁস মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন,‘ সিএবি থেকে খামে করে টিকিট বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।’ ওঁরা না জেনেই তাঁরা এই মন্তব্য করেন। আইপিএলে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব সিএবি’র নয়, কেকেআরের। সিএবি এই ক্ষেত্রে ইডেন ভাড়া দিয়েছে শাহরুখ খানের রেড চিলিজকে। তাঁরা বেশ কিছু ফ্রি টিকিট দেয়। এই টিকিট গত ১১ বছরে প্রসূন মুখোপাধ্যায়, জগমোহন ডালমিমা এমনকী সৌরভ গাঙ্গুলির আমলে ক্লাব প্রতিনিধি, প্রাক্তন পদাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। মহারাজের আমলে ক্লাব প্রতিনিধিরা কিঞ্চিৎ বেশি টিকিট পাচ্ছেন। কিন্তু book my show এর ওই রিসিট নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে যা হল তা অভাবিত। এতে ওই ধিকৃত কর্তারা সৌরভের ইমেজকেই কলুষিত করলেন। ওই টিকিট বন্টন সংস্থার পক্ষে সিএবি’তে থাকা প্রতিনিধিরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শনিবার সন্ধ্যায় সিএবি’তে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল এই টিকিট কেলেঙ্কারি নিয়ে সিটিজেন্স ফোরামের সাংবাদিক সম্মেলনের নেপথ্যে আছেন প্রাক্তন এক কর্তা। সিটিজেন্স ফোরাম বিনোদ রাইদের চিঠি দিলেও বিস্ময়করভাবে কালোবাজারি নিয়ে কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে কোনও চিঠি দেননি।

তবে এটা ঘটনা, ৫০০ টিকিট কিংবা সৌজন্য টিকিট ইডেনের আশেপাশে বিশেষত চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম উঠছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এই চিত্র শনিবারও টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। পুলিশ সব দেখেও চুপ। কিছু পুলিশ আধিকারিক তো কালোবাজারিদের হাত থেকে টিকিট কেড়েই দায়িত্ব পালন করছেন। সেই টিকিট চলে যাচ্ছে পুলিশ তাঁবুর মালিদের কাছে। এমনিতে আইপিএলের ভরা বাজারে মালিরা ভিআইপি। কারণ ক্লাব কোটার টিকিটের বড় অংশ তাঁদের কাছে চলে যায়। পুলিশের নাকের ডগায় বেশ কিছু স্বাস্থ্যবান যুবক দাদাগিরি করছে। এঁরা সবাই একটি বা দুটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের। পুলিশ সব দেখেও চুপ। কালোবাজারিতে যুক্ত টিকিট বন্টনকারী সংস্থার কিছু কর্মী। সব মিলিয়ে আইপিএলের টিকিট কালোবাজারি নিয়ে ময়দান হঠাৎ সরগরম। এরপর প্লে- অফের টিকিট নিয়ে হবে আরও নাটক। কেকেআর শনিবার জিতে যাওয়ায় মঙ্গলবার ইডেনে কেকেআরের শেষ গ্রুপ ম্যাচের টিকিটও রবিবার থেকে হয়ে উঠবে মহার্ঘ্য।

No comments:

Post a Comment

Pages