জীবনের নাম মোহনবাগান | কুনাল ঘোষ - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

জীবনের নাম মোহনবাগান | কুনাল ঘোষ

Share This

ক্লাবে চলা অচলাবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কুনাল ঘোষ 





অঞ্জন মিত্রের বিরুদ্ধে অন্যায় অপপ্রচারের আগে ভাবুন

সবিনয় নিবেদন,

একজন মোহনবাগান সমর্থক হিসেবে কিছু বক্তব্য।

জ্ঞান হওয়া থেকে আমি মোহনবাগান সমর্থক। বাবার কাকা প্রয়াত দীনেশ চন্দ্র ঘোষের সৌজন্যে শিশুকালের প্রতিটি বিকেল কেটেছে ক্লাবের লনে।
তাঁরই শ্রাদ্ধের দিন আমাদের বাড়িতে টুটুদার সঙ্গে আমার প্রথম ভালো করে আলাপ।
সদলে আমরা গ্যালারিতে। মোহনবাগান মাঠ তো বটেই, যুবভারতীর যুগ হতে প্রথম সেই বিখ্যাত 52 ফুটের সবুজ মেরুন পতাকা তৈরি আর বয়ে নিয়ে যাওয়া।
এর মধ্যে আমি তখন "প্রতিদিন" থেকে গেছিলাম "আজকাল"-এ। সালটা সম্ভবত 1994. ঘোষিত ক্রীড়া সাংবাদিক না হলেও খেলার সঙ্গে থাকতাম ; আমাকে পাঠানো হয়েছিল টুটুদার সাক্ষাৎকার নিতে। লেখা ঠিক ছাপার মুখে কাগজের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় টুটুবাবুর কথা ছাপা হবে না। তার প্রতিবাদে আমি সঙ্গে সঙ্গে তখনকার দু'নম্বর কাগজ "আজকাল" ছেড়ে অনেক পিছিয়ে থাকা প্রতিদিন-এ ফিরে আসি। সম্পাদক অশোক দাশগুপ্তর প্রতি আমার আবেগ ও শ্রদ্ধাকেও তখন বিবেচনায় রাখি নি। 
2005. মোহনবাগান নির্বাচনে টুটুদা-অঞ্জনদার জয় সুনিশ্চিত করতে সর্বাত্মকভাবে নামি। উল্টোদিকে থাকা তারকাদের এদিকে টেনে আনা। উদাহরণ : তখন সাংসদ অমিতাভ নন্দীকে বলে ওঁর বাড়িতে তাপস চট্টোপাধ্যায়কে আনিয়ে অঞ্জনদা, টুম্পাইয়ের সঙ্গে বসানো। বা সাতসকালে সুজিত বসুর বাড়িতে। এরকম অসংখ্য উদাহরণ। যারা স্নেহ করতেন আমায়, অথচ ক্লাব রাজনীতিতে টুটুদার উল্টোদিকে, তাদের ঐক্যের রাস্তায় আনা। বহু ঘটনা।
2012. মাঠে অশান্তি। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ থেকে উঠে গেল মোহনবাগান। মাঠ থেকেই মদন মিত্রর ফোন," টুম্পাই, দেবাশিসকে বোঝাও টিম অন্তত মাঠে যাক। না হলে সাসপেনশন, অবনমন।" ফোন করলাম। টুম্পাই তাদের যুক্তি দিল। সেটাও ফেলনা নয়। তারপর কঠিন যুদ্ধ। এআইএফএফের শাস্তির মুখে ক্লাব। হুলুস্থুলু কান্ড। অতীন ঘোষ, প্রিয়াল চৌধুরি, সবাই বসা হল। ক্লাব যাই করুক, সমর্থক হিসেবে সবাই রাস্তায়। বিভিন্ন এলাকায় সভা। মোহনবাগানপ্রেমী মানুষ সই সংগ্রহে। লক্ষাধিক সই সহ দিল্লি গেলাম তিন প্রতিনিধি। মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, আমি। ফুটবলভবনে বৈঠক এআইএফএফ সচিব কুশল দাসের সঙ্গে। সঙ্গে সইয়ের পাহাড়। আরও কিছু কথা। শেষে ঠিক হল, গোটা মরশুম নির্বাসন নয়। কটা ম্যাচের সাসপেনশন। অবনমনের ঝুঁকি নেই। সেদিনই আমরা বঙ্গভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে বিষয়টি জানালাম। সমর্থকদের আবেগের জয়। মোহনবাগানকে বাদ দিয়ে যে আই লিগ প্রাণহীন, আই লিগেরও ক্ষতি, সেটা প্রতিষ্ঠিত। পরদিন ক্লাবস্তরের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়।

এসব কথা বলার কারণ, এটা বোঝানো যে আমি মনেপ্রাণে সবুজ মেরুণ। হয়ত ক্লাব সংগঠন করি নি। হয়ত সদস্য হয়েছি পরে, প্রতিদিন-এ চাকরির সময়ে। কিন্তু টুটুদাদের হাত শক্ত করতে যখন দরকার পড়েছে, নেমেছি। তা সে ভোট হোক। বা মারাদোনাকে ক্লাবের মাঠে আনার স্পনসর জোগাড়ের চেষ্টা। 
আমি গর্বিত, আমি মোহনবাগান সমর্থক। 
সেই অধিকার থেকেই বলতে চাই, হঠাৎ যে পরিবেশ দেখা যাচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক।
যেভাবে প্রচার হচ্ছে অঞ্জন মিত্র পদ আঁকড়ে আছেন বলে যেন ক্লাবের ক্ষতি, এটা ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন অসুস্থ হতেই পারেন। তাঁর জন্য সব আটকে? তাঁকে অপদস্থ করে তাড়াতে হবে ? তাঁর কোনো অবদান নেই? ক্লাবকে তিনি এতকাল ধরে রাখেন নি? এই মর্মে ধারণা ছড়ানো হবে আর সদস্য, সমর্থকরা মেনে নেবেন?
অঞ্জনদাকে চিনি 1990 সাল থেকে। ক্রীড়া সাংবাদিক অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর নিউ মার্কেটের পিছনের অফিসে যেতাম। পরবর্তীকালে ঘনিষ্ঠতা কখনোই তেমন হয় নি। কিন্তু চিরকালীন ভালো সম্পর্ক।

বন্ধু, ভেবে দেখুন।
টুটু-অঞ্জন তো সমার্থক ছিলেন। 
টুটুদা, টুম্পাই, অঞ্জনদা, দেবাশিস দত্ত তো এক টিম।
সাম্প্রতিক অতীতে তো টুটুদা, অঞ্জনদার থেকে সক্রিয় টুম্পাই, দেবাশিস। টুটুদার ছোট ছেলেও তো শুনেছি কর্মসমিতিতে। সবাই জানতাম অঞ্জনদা নিজে সরে যাবেন আর টুম্পাই সচিব হবে।

তাহলে হঠাৎ কী হল যে অঞ্জনদাকে এভাবে জনমানসে ছোটো করে, অপমান করে, ক্ষমতালোভী খলনায়ক সাজিয়ে ক্লাবে গোষ্ঠীবাজি বাড়ানো হচ্ছে? 
টিম দুএকটা ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ছাড়া বড় সাফল্য পায় নি। কার দোষ? কারা টিম করল? একা অঞ্জনদা দায়ী? আজ বকেয়া মেটানোর দায় শুধু সচিবের? কিছুদিন অন্তর পদত্যাগের আর পদে ফেরার খেলাটা তো বাংলা মেগা সিরিয়ালকে হার মানাচ্ছে। এতে ক্লাবের সম্মান থাকছে? 
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় দারুণ প্লেয়ার। তার মানেই দারুণ প্রশাসক ?? ফুটবল টিমের জন্য কত টাকার স্পনসরশিপ এনেছেন উনি? কেন রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন ওঁরা? তিন বছরের পদে থেকে এত সিনিয়র অঞ্জনদাকে অসম্মানের চিত্রনাট্যে কেন জড়াচ্ছেন উনি ? ফুটবলাররা আমাদের হিরো। ক্লাব দখলের খেলায় তাঁরা পড়ে গেলে সমস্যা।
আমার ধারণা, টুটুদা-টুম্পাই আর অঞ্জনদার সেতুবন্ধন ভালো। কিন্তু দুএকজন পরজীবী মধ্যসত্ত্বভোগী নিজেদের প্রচার ও সুবিধার্থে এই দূরত্ব বাড়ানোর খেলা খেলছে। বড় নামের এবং ধনী পরিবারের পাশে হাঁটা ভালো। কিন্তু নিজের থেকেও তো ক্লাবের প্রতি অবদান থাকবে। এইরকম দুএকজন গোমস্তা, মোসাহেব এখন টুটুদাদের সঙ্গে অঞ্জনদার দূরত্ব বাড়াচ্ছে। সুস্থ সম্পর্ক রাখতে দেবাশিস, মানে দেবতার আশিস প্রার্থনীয়। দেবতার আশিস দেবতার গ্রাস হয়ে উঠলে সমস্যা।
দূরত্ব কাম্য নয়।
যে অঞ্জন মিত্র নিজেই সচিব পদ ছাড়তে তৈরি ছিলেন, যিনি টুম্পাইকে পুত্রবৎ স্নেহ করেন, তাঁকে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে শেষ পর্বে এমন অপমান মোহনবাগানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে না।
টুটুদার অনেক টাকা। ক্লাবের দরকার বোসবাড়িকে। স্বাভাবিক। পদে না থাকলে তো কেউ ক্লাবপ্রেম দেখিয়ে টাকা দেবেন না। তাই টাকা জন্য স্পনসরদের যেমন লোগো দিতে হয়, তেমনই ক্লাবের বড় পদও দিতে হবে। সেতো একাধিক চিট ফান্ডের মালিককেও মোহনবাগান সদস্য করেছিল বা বড় পদ দিয়েছিল। এটা টাকা জোগাড়ের বাধ্যবাধকতা। করতে হয় এসব। পদে না থেকে কেউ টাকা দিলে বোঝা যেত কার কত মোহনবাগানপ্রেম। সবটাই পদ। সবটাই প্রতিষ্ঠার বিনিময়মূল্য। টুটুদা বা বোস পরিবার মাথার উপর থাকলে নিশ্চিতভাবে মোহনবাগানের লাভ। তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরা বড় পদেই থাকুন। কিন্তু, মোহনবাগানে তাঁদের প্রতিষ্ঠার পিছনে অঞ্জন মিত্রের সহযোগী হাতটা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না।
একজন সমর্থক হিসেবে আমার অনুরোধ, কেউ কোনো প্ররোচনায় পা দেবেন না। যা হচ্ছে, তা ক্লাবের পক্ষে ঠিক নয়। অনেক কঠিন কাজ করা বাকি। কারুর প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কেউ কাউকে অপমান করবেন না। অঞ্জন মিত্র অসুস্থ। ঠিক। কিন্তু এতকাল পর হঠাৎ তাঁর জন্য ক্লাবের সব আটকে, আপনি বিশ্বাস করবেন? এটা হতে পারে? যে লোক নির্বাচনেই সচিব পদ ছাড়তেন, তাঁকে অপমান করে পরিস্থিতি ঘোলা করার মানে কী?

আমার অনুরোধ, টুটুদা-অঞ্জনদারা মুখোমুখি বসে সমস্যা মেটান। বৈঠকের ঘরে টুম্পাই থাকুক আর অঞ্জনদার কন্যা সোহিনী। উত্তরাধিকার যদি বিবেচ্য হয়, আজন্ম মোহনবাগানি সক্রিয় সংগঠক টুম্পাইয়ের সমান নাম সোহিনীও। আর ফুটবল দুনিয়ায় মোহনবাগান ক্লাব যদি এক আজকের প্রজন্মের নারীমুখকে সামনে তুলে ধরতে পারে, আর এক নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। সোহিনীও দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ। হাল ধরার উপযুক্ত। যার বাবা দীর্ঘকালীন মোহনবাগান সচিব ও স্বামী তারকা ফুটবলার, তার শ্বাসপ্রশ্বাসে তো ফুটবল আর ক্লাব থাকবেই।

মোহনবাগানে জটিলতার অবসান হোক।
টুটুদা-টুম্পাই আর অঞ্জনদা-সোহিনীর বৈঠকে ঘুচে যাক দূরত্ব। তৈরি হোক ঐকমত্যের প্যানেল।
মোহনবাগানের জয় দেখতে পেলেই আমরা খুশি। তার বেশি কিছু চায় না আমার মত সাধারণ সমর্থকরা।
টুটুদা-অঞ্জনদাদের মতপার্থক্য মিটুক। অঞ্জনদাকে কুৎসিত আক্রমণের মুখে ঠেলে দেওয়া বন্ধ হোক। সদস্য, সমর্থকরা ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। ভোট এড়িয়ে যোগ্য কমিটি গঠন করে ওঁরা চালান।

আর যদি তা না হয়, তাহলে দুই শিবিরকেই নির্বাচনী সংঘাতে যেতে হবে। সেটা কাম্য নয়। আর সংঘাত যদি অনিবার্য হয়, তাহলে দেখার মত বিষয় হবে, টুটুদা, টুম্পাই শিবিরের আক্রমণ থেকে অসুস্থ বাবাকে সসম্মানে জিতিয়ে আনতে এই শিবিরের নেতৃত্বে থাকবেন একজন তরুণী, অঞ্জনকন্যা সোহিনী। মোহনবাগান কি মহিলাসচিব উপহার দিয়ে সমৃদ্ধ করবে, গর্বিত করবে ভারতের ফুটবলকে ?
এখনই বলা কঠিন।
তবে সংঘাত নয়, ঐক্য কাম্য।
সেক্ষেত্রে অঞ্জন মিত্রকে সসম্মানে সচিব পদ থেকে অবসরের পরিবেশ দেওয়া হোক। অঞ্জনদা ব্যাটন তুলে দিন টুম্পাইয়ের হাতে। সহসচিব হিসেবে থাকুক সোহিনী।

টুটুদা-অঞ্জনদার অবদান অনেক। এখন আপনারা কাজের চাপ কমিয়ে সম্মানজনক পদে থাকুন। কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসুক পরের প্রজন্মের টুম্পাই আর সোহিনী।

এগিয়ে চলুক মোহনবাগান।

No comments:

Post a Comment

Pages