চার ঘণ্টার বোর্ড মিটিংয়েও কাটল না মোহন বাগানের জট - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

চার ঘণ্টার বোর্ড মিটিংয়েও কাটল না মোহন বাগানের জট

Share This

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করা নিয়ে নেওয়া হবে আইনজীবীর পরামর্শ


নিজস্ব প্রতিনিধি,কলকাতা: শুক্রবার কালবৈশাখীর মধ্যেই হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটে মোহন বাগান ফুটবল ক্লাব (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের বোর্ড মিটিং শুরু হয়। ঠান্ডা- গরম পরিবেশে প্রায় চার ঘণ্টা দীর্ঘ আলোচনার পর মোহন বাগানের সাম্প্রতিক ঝামেলা মিটল না। মোহন বাগানের পদত্যাগী সভাপতি এবং সচিবের বেড়ে চলা মানসিক দূরত্ব কিছুটা কমলেও যুযুধান দুই পক্ষের সমঝোতার বিন্দুমাত্র লক্ষ্ণণ দেখা যায়নি। ৩৭ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার এই সমঝোতা না হওয়ার বিষয়টি ফুটে ওঠে। মোহন বাগানের পদত্যাগী সভাপতি হঠাৎ সচিবের হাত ধরে বলে ওঠেন,‘ আমাদের ৬০ বছরের বন্ধুত্বে কেউ ফাটল ধরাতে পারবে না।’ সভাপতির বক্তব্য শেষ হওয়ার পরেই প্রশ্ন করা হয় মোহন বাগান প্রশাসক হিসাবেও কি আপনারা এই ভাবে চলবেন? সভাপতি তখনই সচিবের হাত ছেড়ে দেন। সভাপতিকে বলতে শোনা যায়,‘ সময়েই বলবে মোহন বাগানে প্রশাসক হিসাবে আমরা একসঙ্গে চলব কিনা। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড করার সিদ্ধান্ত নিক নতুন কমিটি।’

এদিন সচিবকে প্রশ্ন করা হয় মোহন বাগান মাঠে বোর্ড মিটিং না হলেও আপনি শেষ পর্যন্ত সভায় এলেন। প্রায় চার ঘণ্টা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে বসে ফুটবল সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা করলেন। তবে সভাপতির সঙ্গে আপনার সাম্প্রতিক তিক্ততা কি মিটে গেল? সচিব বলেন,‘ আমি কিন্তু টুটুকে আক্রমণ করে কোনও বিবৃতি দিইনি। একটি কোম্পানির স্পনসরশিপ ডিল নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলাম। তবে সব সমস্যা মিটে গেল কিনা তা সময়েই বলবে।’

৩৭ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনে কিঞ্চিৎ উত্তেজিত ছিলেন সভাপতি। পুত্র তাঁকে সামলান। ইদানীং মোহন বাগানের পরিবারতন্ত্র নিয়ে অনেক কথা উঠছে। এখানেই তাঁর মূল আপত্তি। এর ব্যাখা দিতে গিয়ে তিনি সচিবের পরিবারের সঙ্গে নিজের পরিবারের বন্ডিংয়ের কথা উল্লেখ করেন। এমনকী তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘সচিব কন্যা আমার মেয়ে। আর আমার পুত্র সচিবের ছেলে।’ যার অর্থ দুই বোর্ড সদস্য তাঁর চোখে‘ ভাই- বোন।’ তাই সাংবাদিক সম্মেলনে অবধারিতভাবে প্রশ্ন ওঠে ‘ভাই- বোন’ জুটি কি একই প্যানেলের হয়ে নির্বাচনে লড়বেন? সোহিনী মিত্র প্রশ্নটি লুফে নিয়ে বাবার ঢঙে সোজা বলে দেন,‘সেটা সময়েই বলবে।’

ফুটবল টিমের স্বার্থে সভাপতি- সচিবের মধ্যে যাবতীয় মতবিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন অর্থ সচিব। কিন্তু তাঁর চেষ্টাও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। মিটিংয়ের পর তাঁকে বেশ হতাশ মনে হচ্ছিল। এদিনের সভার পর ১৫ কোটির নতুন স্পনসরশিপ আসার ব্যাপারে কোনও জট কাটল না। আপাতত এম পি বিড়লা গোষ্ঠীর ৫০ লাখ স্পনসরশিপই ভরসা মোহন বাগান ফুটবল টিমের। দুই শীর্ষ কর্তার ঝামেলার জন্যই এর আগে ফরাসি সংস্থা লাগ্যাডোরে আর ফুটসলের স্পনসর জেভিয়ার ব্রিটোর কোম্পানির ‘ডিল’ হয়নি। এবারও কি তা হবে? সচিব অবশ্য মুম্বইয়ের বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা বললেও বোর্ড মিটিংয়ে বাকি সদস্যদের কিছুই জানাননি। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন,‘ ডিল ফাইনাল হলে যথাসময়ে বাকি বোর্ড সদস্যদের জানানো হবে।’ মোহন বাগান কর্মসমিতির নতুন তিনজন ডিরেক্টর নেওয়ার ব্যাপারেও কোনও আলোচনা হয়নি। কর্মসমিতির ওই প্রস্তাব বোর্ড মিটিংয়ে সচিবের পক্ষে পাশ করানো বেশ কঠিন। তবে কি ফের নতুন কোম্পানি গঠন করা হবে সবুজ মেরুনে?
তবে দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে এই মিটিংয়ে কি হল? অনেকটাই পর্বতের মুষিক প্রসব। তবে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেডে পরিণত করার যে প্রস্তাব সচিবগোষ্ঠী গত বৃহস্পতিবার দিয়েছিলেন তা সভাপতি, অর্থ সচিব, সহ সচিব উড়িয়ে দিতে পারেননি। এই ব্যাপারটি নিয়ে দুই পক্ষই আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সভাপতির পাশে বসেই সচিব জানিয়ে দেন গত মরশুমে লোগো লাগিয়ে খেলার জন্য একটি কোম্পানির কাছ থেকে কত অর্থ পাওনা আছে তা লিগ্যাল সেল খতিয়ে দেখবে। সচিবের এই উক্তির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট আপাতত আপসের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। সভাপতি এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন,‘ ২০০৬ সালের নতুন কোম্পানি অ্যাক্ট অনুসারে তিনি সম্প্রতি এক কোটি অনুদান দিয়েছেন কোম্পানিকে। ধার নয়। স্পনসরমানিও নয়। আমরা কিন্তু তথাকথিত ডামাডোলের মধ্যেও সুখদেবকে ইস্ট বেঙ্গলের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছি।’ ঘটনা হল, ওই টাকায় মোহন বাগান ফুটবলারদের পেমেন্ট দেওয়া হয় বুধবার। মোহন বাগানের ২৫ জন চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারের ডিল নিয়ে এদিন আলোচনা হয়। সচিব মান্যতা দিয়েছেন ওই চুক্তিতে। আ‌ই ঩লিগের কথা ভেবে তিন- চারজন অনূর্ধ্ব-২২ ফুটবলারকে নেওয়া হবে কলকাতা লিগের আগেই। মিটিংয়ের শেষ লগ্নে সহ সচিব- অর্থ সচিবরা ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ১৫ জুন থেকে অনুশীলন শুরু করার পরামর্শ দেন সচিবকে।

১ জুন ইস্ট বেঙ্গলের অনুশীলন শুরু: দলে অনেক তরুণ মুখ। তাই অনভিজ্ঞ ফুটবলারদের তৈরি করে নিতে আগামী ১ জুন থেকে অনুশীলন শুরু করতে চাইছেন সুভাষ ভৌমিক। শুক্রবার কোচ হিসাবে বাস্তব রায়ের সঙ্গে চুক্তি করল ইস্ট বেঙ্গল। সুভাষ ভৌমিককে টিডি হিসাবে ঘোষণার দিনেই বাস্তব রায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল ইস্ট বেঙ্গল। পরে গত আই লিগে সেরা কোচ গিফট রাইকান ইস্ট বেঙ্গলে কোচ হতে চেয়েছিলেন। রাইকান টিডি সুভাষ ভৌমিকের পছন্দের তালিকায় ছিলেন। তবে ক্লাবের আর্থিক সঙ্কটের জন্যই ‘সুলভ কোচ’ হিসাবে বাস্তব রায়ের শিঁকে ছিঁড়ল। তিনি রীতিমতো ইন্টারভিউ দিয়ে ২০১৫ সালে হাবাসের সহকারী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে আইএসএল জয়ী এটিকে’র কোচ ছিলেন। এবার আইএসলে এটিকে’র অস্থায়ী কোচ হিসাবে কাজ করেছেন বাস্তব। পরে তিনি যুব উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন। সেই দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারে সময় নেন। শেষ পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গলের কোচ হয়ে প্রাক্তন ফুটবলারটি বলেন,‘লাল হলুদে চাপ আলাদা। তাই কোচিং করিয়ে আলাদা আনন্দ আছে। আমি জুনিয়র ইস্ট বেঙ্গলের ফুটবলার ছিলাম। তাই বলতে পারেন ঘরেই ফিরলাম।’ কলকাতা লিগের জন্য আসারা আর আল আমনাকে নেওয়া হয়েছে। এক স্টপার ও স্ট্রাইকারকে নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment

Pages