বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - জর্জে হাজি । দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

বিশ্বকাপ ফুটবলঃতারকা পরিচয় - জর্জে হাজি । দীপ্তাশিস দাসগুপ্ত

Share This




ফুটবল দলগত খেলা। যার দরুন অনেক ক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে দল ভালো না খেললে একজন দক্ষ ফুটবলারের অসাধারণ ব্যাক্তিগত নৈপুণ্য ঢাকা পড়ে যায়। সেইরকম কোন দেশের দল যদি সামগ্রিক ভাবে দুর্বল বা কম শক্তিশালী হয় তাহলে সেই দেশে জন্মানো কোনও একজন যুগান্তকারী ফুটবলারের পক্ষে একার হাতে সেই দেশের খেলার সার্বিক মানের উন্নয়ন ঘটানো অসম্ভব। তাই অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশের জাতীয় দলের সাফল্যহীনতার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সেই অসাধারণ ফুটবলারটির নৈপুণ্য। এমন ই একজনের কথা বলতে চাই আজ। তাঁর নাম Gheorghe "Gică" Hagi।



ছিলেন মূলত মাঝমাঠের খেলোয়াড়। নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে উঠে একের পর এক ঠিকানা লেখা পাস বাড়াতেন ফরওয়ার্ড দের জন্য। কখনো কখনো নিজেও উঠে গিয়ে গোল করতেন দলের প্রয়োজনে। তাঁর অসাধারণ পায়ের কাজ ও ড্রিবলিং দক্ষতার জন্য তাঁকে কারপেথিয়ান মারাদোনা বলা হয়।এককথায় সত্যিকারের একজন শিল্পী খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। রোমানিয়ার জাতীয় দলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন যথাক্রমে ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮। খেলেছেন তিনটি UEFA European Championship এও, ১৯৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০০। দেশের জার্সি গায়ে মোট ১২৫ টি খেলাতে ৩৫ টি গোল করেছেন। পাশাপাশি ক্লাবের জার্সি গায়ে ৬৬৩ টি খেলাতে করেছেন ২৮৩ গোল। জন্ম ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ফেব্রুয়ারী রোমানিয়ার সাসেলে তে। 



খুব অল্প বয়স থেকেই চারপাশের লোকজন দের পায়ের দুর্দান্ত কাজ দেখিয়ে মুগ্ধ করে রাখতেন। দুপায়ে খেলতে পারলেও ঝোঁক ছিল মূলত বা পায়ে খেলার প্রতি। মাত্র ১৮ বছর বয়েসেই ডাক পান রোমানিয়ার জাতীয় দলে। ক্রমে ক্রমে তাঁর অসামান্য প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় হয় সমগ্র ফুটবল বিশ্বের। ১৯৯৪ তে তাঁর অসামান্য নৈপুণ্যের কারণে রোমানিয়া কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌছয় এবং সুইডেনের বিরুদ্ধে তুল্য মূল্য লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে পরাজিত হয়। হাজি সেই বিশ্বকাপে মোট তিন টি গোল করেন যার মধ্যে একটি ছিল কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ৪০ গজ দূর থেকে করা শটে। কলম্বিয়ার গোল রক্ষক অস্কার করডোবা গোল ছেড়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যা নজর এড়ায় নি হাজির। ৪০ গজ দূর থেকেই অসাধারণ একটি শট নেন যা উঁচু হয়ে গিয়ে পরে অনেকটা বাঁক খেয়ে নিচে নেমে গোলে ঢুকে যায়। যা কিনা সেই বিশ্বকাপের তো বটেই, গোটা শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। উপরন্তু তার পাসিং, ড্রিবলিং, বল কন্ট্রোল, খেলা তৈরী করা সারা দুনিয়ার মন জয় করে নেয়। এছাড়া ক্লাব ফুটবলেও পেয়েছেন নানান দলগত ও ব্যাক্তিগত সাফল্য। 



বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন ট্রফি জিতেছেন, তাঁর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা দুই ক্লাবের হয়েই Supercopa De Espana জয়।৭ বার রোমানিয়ার ও ৩ বার তুরস্কের সেরা ফুটবলার হয়েছেন। Steaua București র হয়ে ৩ বার রোমানিয়ান লিগ, ২ বার Cupa României ও ১ বার European Super Cup, Galatasaray র হয়ে ৪ বার Süper Lig, ২ বার Turkish Cup ও Turkish Super Cup ও ১ বার করে UEFA Cup ও UEFA Super Cup, Brescia র হয়ে ১ বার Anglo-Italian Cup জিতেছেন। সর্বোপরি, এটা বলা যায় যে হাজির মত খেলোয়াড় দের কোন পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করতে যাওয়া টা চরম মূর্খামি হবে। তাঁর ব্যাক্তিগত ফুটবল শৈলীর অসামান্য প্রদর্শনের বিচার কেবলমাত্র সংখ্যা দিয়ে হয় না। 



তাঁর দুর্ভাগ্য, রোমানিয়ার মত দেশে জন্মেছেন তিনি, যে দেশের ফুটবল ইতিহাস অন্যান্য বড় দলের মতন সেইরকম সমৃদ্ধ নয়। তা স্বত্ত্বেও তিনি ফিফার শতাব্দীর সেরা ১০০ জন ফুটবলারের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন এবং ২০০৩ সালে রোমানিয়ার শেষ ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন উয়েফার দ্বারা। তাঁর সময়ে এমন কাউকে তিনি পাশে পাননি যাকে সাথে নিয়ে দেশের ফুটবলকে বৃহত্তর জায়গাতে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তাই বলে তাঁর কৃতিত্ব কে খাটো করা যাবে না।তাঁকে রোমানিয়ান রা ভালবেসে 'দা কিং' ও তুর্কিরা ভালোবেসে 'দা কমান্ডার' বলে ডাকতেন। তাঁর নামটি ও চিরকাল ফুটবলের আকাশে এক উজ্জ্বল তারা হয়ে জ্বল জ্বল করবে।

No comments:

Post a Comment

Pages