চুনীকে মোহনবাগানের প্রেসিডেন্ট চান অরুময় | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

চুনীকে মোহনবাগানের প্রেসিডেন্ট চান অরুময় | আজকাল

Share This


নির্মলকুমার সাহা: যেখানে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল খেলবে, সেটাই আসল লিগ। মনে করেন একসময় দাপটের সঙ্গে মোহনবাগানের হয়ে কলকাতা ময়দানে খেলে যাওয়া লেফট আউট অরুময় নৈগম। আর মোহনবাগানে এখন যে ডামাডোল চলছে, তা থেকে ক্লাবকে মুক্ত করতে তিনি চুনী গোস্বামীকে প্রেসিডেন্ট চাইছেন। ফুটবল থেকে তিনি এখন অনেকটাই দূরে। বহু বছর আগে খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর তবু সাদার্ন রেলের চাকরি সূত্রে কিছুটা জড়িয়েছিলেন ফুটবলের সঙ্গে। দেখতে হত অফিসের দলটাকে। সেই চাকরি থেকেও অবসর নিয়েছেন প্রায় দুই দশক আগে। এখন ৭৭ বছর বয়সে একেবারেই ‘‌‌অবসর’‌ জীবন বেঙ্গালুরুর বাড়িতে। সেখান থেকে ফোনে ১৯৬২–র এশিয়াডে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য অরুময় বলছিলেন, ‘‌আমার বাড়ি থেকে কান্তিরাভা স্টেডিয়াম সাত কিলোমিটার দূরে। ওখানে ফুটবলের বড় ম্যাচ হয়। মাঝেমধ্যে দেখতে যাই। তবে নিয়মিত যাওয়া হয় না।’‌ কেন যান না?‌ অরুময়ের জবাব, ‘‌এখন সব ম্যাচই তো টিভিতে দেখা যায়। বয়স হয়েছে। তাই ঘরে বসে খেলা দেখাটাই বেশি পছন্দ করি। মাঠে যাওয়া, বাড়ি ফেরা অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার।’‌ 

কলকাতার দুই বড় দল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ভারতীয় ফুটবলে এখন অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। এতে মনখারাপ অরুময়ের। বলছিলেন, ‘‌আমি কর্ণাটকের মানুষ। কলকাতায় খেলতে গিয়ে অনেকে ওখানে পাকাপাকি থেকে গেলেও আমি তা করিনি। যখন মোহনবাগানে খেলতাম, কলকাতায় থাকতাম। তারপর চাকরির জন্য চেন্নাইয়ে থাকতে হয়েছে। ও সবের শেষে আবার বেঙ্গালুরুতেই ফিরে এসেছি। কিন্তু ফুটবলের কথা উঠলে, আমি কলকাতা ছাড়া আর কিছু বুঝি না। আর কলকাতার ওই মোহনবাগান তো আমার হৃদয় জুড়ে। মোহনবাগানকে কোনও ম্যাচে হারতে দেখলে এখনও আমার কষ্ট হয়।’‌ কিন্তু কয়েকদিন আগেই তো বেঙ্গালুরু এফসি সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হল। নিজের শহরের দলের এই সাফল্যে আনন্দ হয়নি?‌ ১৯৬১–‌৬৮, টানা ৮ বছর মোহনবাগানে খেলে যাওয়া অরুময় বলছিলেন, ‘‌অতটা হয়নি, যতটা হত মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে। এটা ঘটনা, বেঙ্গালুরু দলটা ভাল খেলছে। ওদের সুনীল ছেত্রি একাই দলকে অনেকটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কলকাতার দুই বড় দলের আগের মতো লড়াকু ভাবটাই এখন যেন হারিয়ে গেছে। বেঙ্গালুরুর কাছে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল দুই দলই চার গোল করে খেল, এটা ভাবাই যায় না। খুব খারাপ লাগে কলকাতার ফুটবলের এই করুণ অবস্থা দেখতে!‌ বিশেষ করে মোহনবাগানের ব্যর্থতা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারি না।’‌ 

আইএসএল বনাম আই লিগ লড়াইটাও ভাল চোখে দেখছেন না এই প্রাক্তন তারকা। বলছিলেন, ‘‌কোথায় কী সমস্যা আমি জানি না। তবে এটা জানি, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়া ভারতের ফুটবল অচল। এই দুই দলকে বাদ দিয়ে এ দেশের ফুটবলের কিছু হতে পারে না। এখন এত দল, কিন্তু মানুষ বেশি আগ্রহী মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে নিয়েই। ওরা যে লিগে খেলবে, সেটাই আসল লিগ।’‌ 

নিয়মিত মাঠে না গেলেও খোঁজ রাখেন এখনকার ফুটবলের। মোহনবাগানে যে প্রশাসনিক–বিতর্ক চলছে, খবর পেয়েছেন তারও। বলছিলেন, ‘‌একটা বড় ক্লাব চলে অনেক মানুষকে নিয়ে। মতপার্থক্য থাকবেই। তবে তা আবার আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়েও নিতে হয়। তা না হলে ক্লাব চলবে কী করে?‌ কেন এতদিন ধরে একটা বিতর্ক চলছে?‌ নিশ্চয়ই ওঁরা সবাই মোহনবাগানের ভাল চান। তা হলে নিজেরা বসে সমস্যা মিটিয়ে নিচ্ছেন না কেন?‌ ইগো নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। ধীরেন দে–র সময়ে তো আমরা অন্য মোহনবাগানকে দেখেছি। তাই এ সব মেনে নিতে পারছি না।’‌ 
মোহনবাগানে প্রশাসনিক ডামাডোলের বাজারে চুনী গোস্বামী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি সভাপতি পদে নির্বাচনে লড়তে রাজি। এখবর পৌঁছেছে অরুময়ের কাছেও। অরুময় বলছিলেন, ‘‌মোহনবাগানে এখন ‌চুনীদার চেয়ে ভাল প্রেসিডেন্ট আর কেউ হতে পারেন না। চুনীদা যদি রাজি থাকেন, তাহলে তাঁকে কেন নির্বাচনে লড়তে হবে?‌ চুনীদাকে তো সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে দেওয়া উচিত। আর চুনীদা প্রেসিডেন্ট হলে মোহনবাগানের ভালই হবে। একজন টেকনিক্যাল লোক, মাঠের লোক, সারাজীবন মোহনবাগানের লোক। মোহনবাগানে ওঁর চেয়ে ভাল প্রেসিডেন্ট আর কোথায় পাওয়া যাবে?‌ একজন মোহনবাগানি হিসেবে আমি চুনীদাকেই প্রেসিডেন্ট চাইছি। চুনীদা মাথার ওপরে থাকলে ক্লাবের অন্যরাও কাজে উৎসাহ পাবেন। শুধু কর্মকর্তারা কেন, ফুটবলাররাও মনোবল ফিরে পাবে।’‌

No comments:

Post a Comment

Pages