আজকালের প্রতিবেদন— বয়স পেরিয়েছে ৮০ বছর। তবু নিয়মিত মোহনবাগান ক্লাবে আসার অভ্যাস ছাড়তে পারেননি ৮০ বছরের ‘যুবক’ চুনী গোস্বামী। হাঁটা চলা আগের মতই সাবলীল। গ্লাস ভরতি চা হাতে ক্লাব লনে বিকেলের আড্ডায় হাজির না হয়ে থাকতে পারেন না। কিংবদন্তি এই ফুটবলারের নানা বক্তব্যে রসবোধের স্বাদ নিতে পাশে ভিড় জমান নবীন থেকে প্রবীণ অনেক সদস্যই। সন্ধ্যে পর্যন্ত ক্লাবে কাটিয়ে বাড়ির পথ ধরেন চুনী। আগেই পদত্যাগ করেছিলেন সহ সচিব সৃঞ্জয় বুস, অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত ও কার্যকরী কমিটির সদস্য মহেশ টেকরিওয়াল। সোমবার সত্যজিৎ চ্যাটার্জি–সহ ১৩ জন কার্যকরী সদস্যের গণপদত্যাগের দিনও বিকেলে বাগান তাঁবুতে আসেন চুনী। ক্লাব লনে পা দিতেই তাঁর পাশে এসে বসেন সত্যজিৎ। চুনী তাঁর কাছে জেনে নেন ক্লাবের বর্তমান পরিস্থিতি। সমস্যাটা কী, তা নিয়েও কথা হয়। পরে প্রচারমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন চুনী রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে।
বুঝিয়ে দিলেন, বাগানের কার্যকরী কমিটির সদ্যদের গণপদত্যাগে তিনি বিস্মিত নন। বরং এমনটাই হওয়া কথা ছিল, বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র ছেলেমানুষের মতো পদ আঁকড়ে থাকায়। অঞ্জনের ভুমিকার তীব্র সমালোচনা করে চুনী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি ক্লাবে তৈরি হত না আগেই অঞ্জন সচিব পদ ছেড়ে সরে দঁাড়ালে। অঞ্জন এখন ভাল করে কথা বলতে পারে না। কাজকর্ম ঠিকঠাক করা দূরে থাক। চলতে ফিরতেও কষ্ট হয়। এমন অবস্থায় মোহনবাগান সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে থাকা কোনও সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। অঞ্জনের ক্লাবে নিঃসন্দেহে অনেক অবদান আছে। কিন্তু একটা সময়ে সবাইকে সরতে হয়, নতুনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
আমি চুনী গোস্বামী, সবাই জানে কত বড় ফুটবলার ছিলাম। তার মানে এই নয়, সারাজীবন সবুজ মেরুন জার্সিতে খেলে যাব। আমি যদি জেদ করে বসে থাকতাম, আমি খেলেই চলব, সেটা কি বাস্তবে সম্ভব, না উচিৎ? এসব শোভা পায় না বলেই নতুনদের জায়গা দিতে আমিও সরে গিয়েছি খেলা থেকে। অঞ্জনেরও সেটাই করা উচিত। ওর সঙ্গে যারা আছে, তারা ওর অবদানের কথা মাথায় রাখে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করুক। সৃঞ্জয়-দেবাশিসদের মতো নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেছে ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।’ বর্তমানে কার্যকরী কমিটিতে যাঁরা আছেন, টুটু বসু সভাপতি পদ থেকে সরে দঁাড়ানোর পর তাঁরা অঞ্জন মিত্রকে সচিব পদ ছেড়ে সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই প্রস্তাব কি অঞ্জনের মেনে নেওয়া উচিত ছিল না? রীতিমতো উত্তেজিত ভাবে চুনীর প্রতিক্রিয়া, ‘কেন অঞ্জনকে সভাপতি করা হবে? ক্লাবে আমার অবদান কম কিছু নাকি? অঞ্জনের থেকে অনেক বেশি যোগ্য আমি সভাপতি হওয়ার ব্যাপারে। আমি তো সভাপতি হতে চাইতেই পারি। অঞ্জনকে যদি সভাপতি করা হয়, তাহলে আমি কনটেস্ট করব। আইনি লড়াইয়েও যেতে পারি।’ বাগানের ঘরের ছেলে বলে পরিচিত আর এক ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য গণপদত্যাগ নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। বলেন, ‘মোহনবাগান কর্তৃপক্ষর কর্মকান্ড নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই।’
কীভাবে চলবে প্রিয় ক্লাব? মোহনবাগান মাঠে আলোচনায় চুনী–সত্যজিৎ। ছবি: মুনাল চট্টোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment