মশার ওষুধ ছিটিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বক্সার কৃষ্ণ | আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

মশার ওষুধ ছিটিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বক্সার কৃষ্ণ | আজকাল

Share This

নির্মলকুমার সাহা: জন্মেছিলেন দরিদ্র পরিবারে। এখনও সেই দরিদ্রই থেকে গেছেন কৃষ্ণ রাউথ। বাবা কাজ করতেন হাওড়া পুরসভায় সাফাইকর্মী হিসেবে। বাবা অল্প বয়সে মারা যাওয়ার পর মা পেয়েছিলেন সেই কাজটা। এখন কৃষ্ণ রাউথের পরিচয় হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী সাফাইকর্মী হিসেবেই। একসময় সকালে ড্রেন পরিষ্কার করতেন। এখন পিঠে সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মশা মারার ওষুধ দেন। দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ। ছুটির দিনগুলো বাদ দিলে যে কদিন কাজ থাকে তাতে মাস গেলে ৪ হাজার টাকার মতো হাতে আসে। 

শিবপুরে কৃষ্ণদের বাড়ি বাগদী পাড়ায়। আগে যা পরিচিত ছিল মেথর পাড়া হিসেবে। এই পাড়ার কাছেই শিবপুর পুলিস লাইন্স। যেখানে রয়েছে বক্সিং রিং। ছোটবেলায় বক্সিং শেখার জন্য কৃষ্ণকে বাবা–মা ভর্তি করে দিয়েছিলেন ওখানে। কোচ তপনকুমার বসুর কাছে সেখানেই বক্সিংয়ের হাতেখড়ি কৃষ্ণর। সেই ছোটবেলায় রাজ্য পর্যায়ে একের পর এক সাফল্যও এসেছে। নানা বয়সভিত্তিক বিভাগে বেশ কয়েকবার রাজ্য চ্যাম্পিয়নের সোনার পদকও উঠেছে কৃষ্ণর গলায়। বাংলার হয়ে সাব–‌জুনিয়র ও জুনিয়র জাতীয় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছেন। ১৯৯১ সালে দুর্গাপুরে সর্বভারতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন রুপোর পদক। কিন্তু এসব সাফল্য আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে পারেনি। সংসারের হাল ফেরেনি। এখন ৪২ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণ সেই হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মীই। কৃষ্ণ বলছিলেন, ‘‌ছোটবেলায় টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার পর লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তাই ভাল কোনও কাজ পেলাম না। বক্সিং করতে টাকা লাগত না। তপন স্যরই সব দিতেন। তাই বক্সিংটাই মন দিয়ে করে গেছি। ওই বক্সিং করতে গিয়েই কোমরে চোট পেয়েছিলাম। টাকার জন্যই ভালভাবে চিকিৎসাও করাতে পারিনি। পিঠে সিলিন্ডার নিয়ে হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। তবু ওই কাজটাই করে যেতে হচ্ছে। মন্ত্রী অরূপ রায় আমাকে খুব ভালবাসেন। ওঁকে বলেছি, যদি কর্পোরেশনে অন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। সেই আশায় আছি।’‌ মা, স্ত্রী, ২ মেয়ে, ১ ছেলে ছাড়াও কৃষ্ণর সংসারেই থাকেন ওঁর ছোট ভাই মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রীও। কৃষ্ণ বলছিলেন, ‘‌কত কষ্টে এত জনের সংসার চালাতে হয়, বুঝতেই পারছেন!‌ ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছি।’‌ 

এই করুণ অবস্থার মধ্যেই কৃষ্ণ রাউথের কাছে একটা ভাল খবর, ওঁকে নিয়ে গানের ক্যাসেট এই মে মাসেই বাজারে আসছে। যে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার, এখন গায়ক ভুবন চ্যাটার্জি। কৃষ্ণ বললেন, ‘‌আমাকে নিয়ে গান! ভাবতেই পারছি না। গান শুনে যদি কেউ আমার পাশে দাঁড়ান, তাহলে সংসারটা বাঁচাতে পারব।’‌ সংসারের এই হালের মধ্যেও বক্সিংয়ের প্রতি কৃষ্ণর টান একটুও কমেনি। এখন বিকেলে নিয়মিত ছোটদের বক্সিং শেখান ওই শিবপুর পুলিস লাইন্সের রিংয়েই। বললেন, ‘‌ওই ব্যবস্থাটাও তপন স্যর করে দিয়েছেন।’‌  
যখন ফুটবল খেলতেন ভুবন, বাড়ির কাছাকাছি শিবপুর পুলিস লাইন্সের মাঠে অনুশীলন করতে যেতেন। ভুবন বলছিলেন, ‘‌রাজা (‌প্রয়াত সঞ্জীব দত্ত)‌, আমি, আরও কয়েকজন ওই মাঠে যেতাম অনুশীলনের জন্য। তখনই একটা বাচ্চা ছেলেকে ওখানকার বক্সিং রিংয়ে প্র‌্যাকটিস করতে দেখতাম। গরিব ঘরের ছেলে। যা ওকে দেখলেই বোঝা যেত। দেখতাম কঠোর পরিশ্রম করতে। আমার খুব ভাল লাগত। তখন থেকেই ও আমার নজরে। পরে বক্সিংয়ে অনেক সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু সেই সাফল্য সংসারের হাল ফেরাতে পারেনি।’‌ একটু থেমে ভুবন যোগ করলেন, ‘‌ওকেই পরে দেখেছি বড় বড় ড্রেনের মধ্যে নেমে ময়লা তুলতে। মাসে কেটেকুটে ওই কাজ থেকে হাতে পেত ১৪০০ টাকা। পরে হাওড়া কর্পোরেশনে অনেকের কাছে ওকে নিয়ে গেছি। অনেক বলাবলির পর এখন একটু বেশি টাকা পায়।’‌ 

এটা হবে খেলা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে ভুবনের গানের ১৮ নম্বর ক্যাসেট। বক্সিং বা একজন বক্সারকে নিয়ে এই প্রথম। ক্যাসেটের নাম ‘‌বক্সার’‌। যে ক্যাসেটে থাকবে কৃষ্ণকে নিয়ে তিনটি গান। যার দু‌টি বাংলায় ও একটা ইংরেজিতে। 
বাংলায় প্রথম গানটির শুরু এভাবে
হে কৃষ্ণা, হে কৃষ্ণা, হে কৃষ্ণা,
ছোট্ট থেকে তোমার লড়াই,
দেখিয়েছে পথ সার্থকতাই,
বক্সিংটাই তোমার জীবন (‌ভুবন)‌
ভালবেসেছ ওই খেলাটাই।

দ্বিতীয় গানটা শুরু হয়েছে এভাবে
বক্সার তুমি বক্সার
বক্সার তুমি বক্সার
তোমার লড়াই কত যে কঠিন
সবার জানা যে দরকার। 

লেখা ও সুর ভুবন চ্যাটার্জি। গাইবেন ভুবনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী কাকলিও। ভূমিকা পড়বেন ঈশিতা দাস অধিকারী। যন্ত্রসঙ্গীত পরিচালনায় অপূর্ব ভট্টাচার্য। পরিবেশনায় বলাকা মিউজিক। 
খেলা ও খেলোয়াড়দের বাইরেও ভুবনের গানের আরও বিষয় রয়েছে। যেমন রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক নানা কাজ, থিম সঙ। রবীন্দ্র সঙ্গীতের ক্যাসেট আছে চারটি। মোট ক্যাসেটের সংখ্যা ২৭ টপকে এবার হবে ২৮।  
কৃষ্ণর জীবনের লড়াই সেই শুরু থেকে দেখতে দেখতেই একসময় ভুবনের মনে হয়েছিল, ওঁকে নিয়ে গান লিখবেন, গাইবেন, ক্যাসেট বের করবেন। সেটাই বাস্তব রূপ পেতে চলেছে মে মাসে। ভুবন বলছিলেন, ‘‌অনেক তারকা খেলোয়াড়কে নিয়ে গান লিখেছি, গেয়েছি, ক্যাসেট বেরিয়েছে। কিন্তু এই কাজটায় হাত দিয়ে আমি খুব রোমাঞ্চিত। খুব আনন্দ হচ্ছে। এই ক্যাসেটটা বের হলে অন্যরকম তৃপ্তি পাব।

No comments:

Post a Comment

Pages