কলকাতার দুই প্রধানের ভবিষ্যৎ বদ্ধ অন্ধকার | বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

কলকাতার দুই প্রধানের ভবিষ্যৎ বদ্ধ অন্ধকার | বর্তমান

Share This

রাতুল ঘোষ: এবারের মতো চলতি ফুটবল মরশুম শেষ। এখন আগামী ফুটবল মরশুমের ভাবনা। আর এই ভাবতে গিয়েই দেখা যাচ্ছে, কলকাতা ফুটবলের দুই বড় ক্লাবের ভবিষ্যৎ প্রায় বদ্ধ অন্ধকার। দুই প্রধানের কর্তারাই কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থেকে গেলেন। সাগরে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁদের নেই। মোহন বাগানে তো এখন তুমুল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা দখলের চাপা লড়াই চলছে। অশক্ত ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য ঘরে-বাইরে প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা গত মরশুমের দল গঠন করেছিলেন, স্পনসর এনেছিলেন, তাঁরা এখন হাত ধুয়ে মাঠের বাইরে সাইড লাইনের ধারে অপেক্ষা করছেন। কবে মাঠ থেকে অবসৃত হন সচিব। কিন্তু মোহন সচিবের পদত্যাগের সামান্যতম ইচ্ছাটুকুও নেই। এদিকে, তাঁর গত মরশুমের বকেয়া অর্থের জোগান দেওয়ার সাধ্যও নেই। উচিত ছিল যাঁরা দল গড়েছেন, স্পনসর এনেছেন, তাঁদেরই গত মরশুমের পাওনাগণ্ডা মেটানোর দায়িত্ব নেওয়া। কিন্তু এখন যাবতীয় বকেয়া মেটানোর দায়িত্ব সহসচিব ও অর্থসচিব চাপিয়ে দিয়েছেন মোহন সচিবের কাঁধে। এই মুহূর্তে সব ধরনের বকেয়া ধরলে প্রায় ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর সেটা অবিলম্বে চাই। সব ফুটবলারের জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট দেখাতে হবে। বিগত অর্থবর্ষের আয় ব্যয়ের হিসেবনিকেশ ও ব্যালেন্স শিট পেশ করতে হবে মহাদেশীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের কাছে। ইতিমধ্যে বকেয়া না পাওয়া কোনও বিদেশি ফুটবলার যদি সরাসরি এএফসি ও ফিফার কাছে নালিশ করে তবে মোহন বাগান ক্লাব সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে। নিদেনপক্ষে বিদেশি মুদ্রায় মোটা আর্থিক জরিমানা গুণতে হবে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবটিকে। 


আসলে দুই বড় ক্লাবের কর্মকর্তারাই বাঙালির গর্বের এই দুই ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানকে পারিবারিক কিংবা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন সম্পত্তিরূপে বিবেচনা করে থাকেন। দুটি বড় ক্লাবই বহিরাগত প্রভাবশালী, ধনবান ব্যক্তিকে ক্লাবে এনট্রি দিতে চান না। কিছুদিন আগে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সচিব কুশল দাস বলেছিলেন, ‘মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের যদি এতই সাপোর্টার বেস থাকে তবে ওরা একটা ভদ্রস্থ কর্পোরেট স্পনসর জোগাড় করতে পারে না কেন?’ তখন কারণটা জানাননি এআইএফএফ সচিব। শুনে নিন, কোনও কর্পোরেট সংস্থা ক্লাবে স্পনশরশিপ মানি ঢালার আগে পরিচালকমণ্ডলীতে নিজেদের অধিকার কায়েম করতে চাইবে। বিজয় মালিয়ার ইউবি গ্রুপের মতো চোখবুজে আট-দশ কোটি টাকা ক্লাবকর্তাদের হাতে তুলে দেবে না। ৯৭ থেকে প্রায় ২০ বছর ইউবি গ্রুপ মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলকে টেনে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন দেশান্তরী, ঋণখেলাপী, পলাতক কিংফিশার মালিক নিজেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন ইংল্যান্ডে। তাঁর দুটি মদের কোম্পানিও কিনে নিয়েছে ডিয়াজিও এবং হেইনকেন। কিংফিশারের নতুন মালিক ইস্ট বেঙ্গলকে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি দেবে না। এই টাকায় ক্লাব চলে না। প্রয়োজন ছিল বড় স্পনসরের। যা আনার সাধ্য নেই দুই বড় ক্লাবের বর্তমান কর্মকর্তাদের। যদি আনতে হয় বড় স্পনসর তবে ৫১ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করতে হবে অবিলম্বে। আর সেটা না হলে ২০১৯-২০ মরশুমে মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গল ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে পারবে না। 

সুতরাং আগামী ২ বছর পরে হয়তো দেখবেন, আই লিগ হয়ে যাবে দ্বিতীয় সারির প্রতিযোগিতা। আইএসএলে খেলতে গেলে অন্তত ২৫ কোটি টাকার স্পনসরমানি প্রয়োজন। সেটা একাধিক স্পনসরের কাছ থেকে এলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু বিনিময়ে যাঁরা অর্থ ঢালছেন তাদের কী দেবেন বড় ক্লাবের কর্তারা? স্পনসর সবসময়ই মাইলেজ চায়। আপনি যদি যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে রেখে ক্লাব চালাতে চান তাহলে স্পনসর পাবেন না। আর ১ কোটি, ২ কোটির কো-স্পনসর দিয়ে বিশাল ফুটবল বাজেট কভার করা সম্ভব নয়। অনেক আগেই দুই বড় ক্লাব কোম্পানি ফর্ম করে বাজারে শেয়ার ছাড়ার চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু ইউবি গ্রুপের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার সময় ক্লাবকর্তারাই ৫০ শতাংশ মালিকানা নিজেদের হাতে রেখে দিয়েছিলেন। ইউবি গেল, দুই প্রধানও ডুবল। এবারেও আই লিগ এল না কলকাতায়। হয়তো আগামী দশ বছর বাদে দেখবেন, মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের অবস্থা হবে, এখনকার মহমেডান স্পোর্টিংয়ের মতো। তবে আবার বলছি দুই বড় ক্লাবের কর্তারাই সংশোধনের অযোগ্য। কোনও সতর্কবার্তাতেই এদের হুঁশ ফিরবে না।


আর বলিহারি এআইএফএফ! ফেডারেশনের পদাধিকারীদের অস্তিত্বই এখন বিলোপ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ফরমানে। বেতনভূক কর্মচারীরা এখন ফেডারেশন চালাচ্ছেন। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডাকারও ক্ষমতা নেই কর্তাদের। তাই এএফসি গাইডলাইন দেওয়া সত্ত্বেও একটি লিগ এখনও চালু করতে পারল না এআইএফএফ।

No comments:

Post a Comment

Pages