ভুবনেশ্বরের হোটেলে চনমনে অথচ সিরিয়াস ফুটবলাররা, আই লিগ হারানোর দুঃখ ভুলতেই ফেড কাপ জিততে মরিয়া মোহন বাগান | বর্তমান - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

ভুবনেশ্বরের হোটেলে চনমনে অথচ সিরিয়াস ফুটবলাররা, আই লিগ হারানোর দুঃখ ভুলতেই ফেড কাপ জিততে মরিয়া মোহন বাগান | বর্তমান

Share This

সোমনাথ বসু, ভুবনেশ্বর, ১৯ মে: সুইমিং পুলে খুব কাছাকাছি সনি নর্ডি ও কাটসুমি। একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন। তা দেখে একটু দূর থেকে শেহনাজেরও চেষ্টা, হাতের জলে ক্যাপ্টেন কাটসুমির চুল ভিজিয়ে দেওয়া। 
মজা করেই কাটসুমি সরে এলেন দু’গজ। কালো এবং সোনালি চুল ঝাঁকিয়ে দিলেন সামান্য লাফ। শেহনাজের ছোঁড়া জল এসে পড়ল তাঁর হাতে। এরপর সনির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে জাপানি মিডিওটির রসিকতা, ‘শেহনাজ পারল না।’

কিন্তু অত সহজে কি কাটসুমি পারবেন বেণী না ভেজাতে? ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন মোহন বাগানের নির্ভরযোগ্য সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। কয়েক মিনিট পরে সনিকে টপকে কাটসুমির কাছে চুপিসাড়ে পৌঁছতে দেখা গেল শেহনাজকে। তারপর পিছন থেকে জল নিয়ে ভিজিয়ে দিলেন তাঁর চুল। এবার হাসি সনিদের মুখেও। শুক্রবার বিকেলে ঘণ্টাখানেকের সুইমিং সেশনে প্রাণখোলা হাসি-উল্লাসে মাতোয়ারা পালতোলা নৌকার যাত্রীরা। পুলের পাশে চেয়ারে বসে ছাত্রদের ‘দুষ্টুমি’ উপভোগ করলেন সপুত্র সঞ্জয় সেনও। উপরের ঘটনা দেখে যদি মনে হয়, রবিবার পয়মন্ত ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি’কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সনি-ডাফিরা, তাহলে পাঠকগণ ভুল করবেন। প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে চলতি মরশুমে ট্রফি খরা কাটানোর মরিয়া তাগিদ। তবে তা হাবেভাবে বুঝতে দিচ্ছেন না কেউই। চোয়াল চাপা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত প্রীতম-বলবন্তরা। কিন্তু তা বলে গোমড়ামুখো বা চিন্তাক্লিষ্ট থাকছেন না একেবারেই। এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ ভুবনেশ্বরের হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে পা রাখে টিম মোহন বাগান। ডাফি-প্রীতমদের কপালে টিপ পরিয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়। হোটেলে ঢুকেই কেউ কেউ সোজা পা বাড়ান লবির পিছনে লাঞ্চরুমের দিকে। কয়েকজন আবার ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নীচে নামেন। দ্রুত লয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেই বিশ্রামের প্রস্তুতি। বিকেলে তরতাজা হয়ে হোটেলের পুলে তুফান তুলতে হবে যে। 
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। কখন কী হবে তা নাকি ডব্লিউ জি গ্রেসেরও অজানা! ফুটবলে আগে থেকেই বলে দেওয়া যায়, কোন দল জিতবে। আর তা না মিললে ‘অঘটন’ শব্দটি তো হাতের সামনেই রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য এবং বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রবিবার ফাইনালে ফেবারিট মোহন বাগানই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অঘটন আজও ঘটে। কেন এগিয়ে রাখা হচ্ছে মোহন বাগানকে? তার প্রধান কারণ, এই দলে ম্যাচ উইনার বেশি। সনি, কাটসুমি, ডাফি, বলবন্ত- এঁরা যে কোনও দিন ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তার উপর কার্ড ও চোট সমস্যায় নেই বেঙ্গালুরু এফসি’র সৃজনশীল মিডিও ক্যামেরন ওয়াটসন। চলতি মরশুমে এখনও পর্যন্ত ট্রফিহীন থাকলেও মাঠ এবং মাঠের বাইরে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের মধ্যে দুরন্ত বোঝাপড়া চোখে পড়ছে। কেউ ভুল করলে অপরজন তা শুধরে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন। সমালোচনা করে আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিচ্ছেন না। তবে কোচ সঞ্জয় সেন জানেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। তাই তাঁর নীতি, সাবধানের মার নেই। টিম হোটেলে পৌঁছে মোহন কোচের সাফ বক্তব্য, ‘ফাইনাল দু’টি দলের কাছেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো বেঙ্গালুরু এফসি’ও এবার ট্রফির মুখ দেখেনি। তাই ওরাও চেষ্টা করবে মরশুম শেষে ফেডারেশন কাপের স্বাদ পেতে। আমাদের ছেলেরা মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত। স্পিরিটিও উঁচু তারে বাঁধা। কিন্তু রবিবার তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে বরাবাটিতে।’ অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে আই লিগ। তীরে এসে তরী ডুবেছে। তাই এবার বাড়তি সতর্ক সঞ্জয় বললেন, ‘এক পয়েন্টের জন্য আই লিগ আসেনি। তাই ফেডারেশন কাপ জিতে সেই দুঃখের ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাই। তার জন্য প্রয়োজন রক্ষণ মজবুত করা এবং প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানো। ছন্দে থাকলে মোহন বাগান দেশের যে কোনও দলকে হারাতে পারে, এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তবে আবার বলছি, বেঙ্গালুরু এফসি যথেষ্ট কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দলগত সংহতিতে প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিতে হবে।’
আগামী মরশুমে আই লিগ এবং আইএসএল নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। মরশুমের শেষ পর্বে কি তাই ফুটবলারদের মনঃসংযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হবে? সঞ্জয়ের মন্তব্য, ‘আমার ছেলেরা কাগজে-কলমে পেশাদার। ওরা জানে কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয়। পরের মরশুমে কি হবে তা এখনও আমরা জানি না। আশা করি, সোমবার এই ব্যাপারে ছবি স্পষ্ট হবে। তার আগে ফেড কাপ কলকাতায় নিয়ে যেতে চাই।’
বার্সেলোনার অনুরাগী সঞ্জয় পুত্র: বাবার সঙ্গে ভুবনেশ্বরে এসেছে সোহান। বিকেলে সুইমিং পুলের পাশে বসে সেও দেখল বলবন্ত-দেবজিৎদের সাঁতার। পড়াশুনোর মাঝে অবসর পেয়েছে বলেই ছেলেকে দলের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সঞ্জয় সেন। প্রসঙ্গক্রমে বললেন, ‘গত কয়েক বছর কোচিংয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার জন্য পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারিনি। ছেলের পরীক্ষার জন্য মহমেডান স্পোর্টিংয়ের দায়িত্ব ছেড়েছিলাম। সোহান বার্সেলোনার ফ্যান। মেসি-নেইমারদের খেলা থাকলে আমি তাই টেনশনে থাকি। বার্সা হারলে ওর চোখমুখ বদলে যায়। তাই আমিও চাই, মেসিরা যেন জেতে।’

No comments:

Post a Comment

Pages