আদ্যপান্ত ফুটবল ভক্ত। শুধুমাত্র তার জন্য কোচ সঞ্জয় সেনকে নিজের টিম মোহনবাগানের পাশাপাশি আরও একটা দলের জয়ের জন্য প্রার্থনা করতে হয়। সেই টিমের নাম বার্সিলোনা। কারণ, সঞ্জয়–পুত্র সোহান সেন মেসি, সুয়ারেজ, নেইমারদের বার্সিলোনার অন্ধভক্ত। মেসিরা হারলে মনের দুঃখে স্নান–খাওয়া করতে ভুলে যায় সোহান। ছেলের যন্ত্রণা চোখের সামনে কোন বাবা আর সহ্য করতে পারেন?
না, পারেন না কোচ সঞ্জয় সেনও। ‘বার্সিলোনার খেলা থাকলে খুব টেনশনে থাকি। ওরা হারলে ছেলের যা ভয়ঙ্কর রূপ হয়, তা দেখলে প্রচণ্ড কষ্ট পাই। তাই প্রার্থনা করি বার্সিলোনার জয়ের জন্য।’ সঞ্জয়ের এহেন মন্তব্যের অবতারণা এদিন টিম হোটেলে ছেলেকে সঙ্গী করে ঢোকা প্রসঙ্গে।
গতবার গুয়াহাটিতে বাবার দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাক্ষী ছিল সোহান। এবারও কটকে চলে এসেছে। তাহলে কি ‘লাক ফ্যাক্টর’? না, মানেন না সঞ্জয়। ‘যখন ইন্ডিয়া টিমে ছিলাম পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। মহমেডানে কোচ থাকাকালীন ছেলের ক্লাস টেন পরীক্ষার জন্য পদত্যাগ করেছিলাম। এখন ওর ছুটি চলছে। তাই নিয়ে এলাম।’ একটু থেমে জোড়েন, ‘টুম্পাইয়ের (সৃঞ্জয় বসু, বাগান সহ–সচিব) ছেলেও আসে দলের সঙ্গে। তরুণ প্রজন্ম যত আসবে ভারতীয় ফুটবলের সুদিন আবার আসবে।’ সোহান এলেও সৃঞ্জয়–পুত্র অরিঞ্জয় আসেনি।
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ভুবনেশ্বরের হোটেলে পৌঁছন সনিরা। আরও আগে চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে মোহনবাগান টিম বাসের সামনে একটি প্রাইভেট গাড়ি পার্ক করার জন্য মিনিট চল্লিশ সময় নষ্ট হয় বিমানবন্দরে। হোটেলে প্রবেশ করেই বাগান ফুটবলাররা সোজা চলে যান মধ্যাহ্নভোজের টেবিলে। রবিবার ফেড কাপের ফাইনালের আগে সনি, দেবজিৎ মজুমদারদের শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাস চুঁইয়ে পড়ছে। যা দেখে খুশি সঞ্জয়, ‘ছেলেদের স্পিরিট দেখে ভাল লাগছে। তবে মাঠে এটার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’ তঁার কথায়, দুটো টিমের কাছে ফাইনাল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চলতি মরশুমে বেঙ্গালুরু ট্রফি পায়নি। মোহনবাগানের ১ পয়েন্টের জন্য আই লিগ হাতছাড়া হয়েছে। ফেড কাপটা জিতে সেই দুঃখ ঘোচাতে মরিয়া সবুজ–মেরুন।
মধ্যাহ্নভোজ সেরে ফুটবলাররা বিশ্রামে যান। নিজের ঘরে পৌঁছনোর জন্য লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে বলবন্ত, বিক্রমজিৎরা। লিফট আসার সময় নষ্ট না করে সিঁড়ি দিয়েই নিজের ঘরে চলে যান হাইতিয়ান তারকা। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘন্টাখানেক হোটেলের পুলে সুইমিং–সেশন সারেন কাৎসুমিরা। সেখান ফুরফুরে মেজাজে সবাই। এডুয়ার্ডোর সঙ্গে হালকা খুনসুটি করতে দেখা গেল ডাফি, প্রবীরদের। পুলের ধারে চেয়ারে বসে কড়া নজর ছিল সঞ্জয়ের। তঁার মতে, রবিবারের ফাইনাল জিততে টিমকে অনেক বেশি কম্পোজড হতে হবে। ধৈর্য রাখতে হবে। দু’দলই গোল করার সুযোগ পাবে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। নির্দিষ্ট দিনে ছন্দে থাকলে মোহনবাগান যে কোনও দলকে হারাতে পারে এটা প্রমাণিত।
চলতি মরশুমে মোহনবাগান–বেঙ্গালুরু পঁাচবার সাক্ষাৎ হয়েেছ। রেকর্ড বলছে ম্যাচগুলিতে মোহনবাগানের প্রধান্য তুলনামূলক বেশি ছিল। মোহন সারথি ওসব মানতে নারাজ, ‘বেঙ্গালুরু ভারতের অন্যতম সেরা দল। গত তিন বছর আমরাও ধারাবাহিক পারফরমেন্স করছি। তবে অতীতের রেকর্ড ম্যাচে খাটবে না। সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ। ওদের কাছে ম্যাচটা কঠিন কিনা জানা নেই। তবে আমাদের কাছে ম্যাচ জেতাটা যথেষ্ট কঠিন হবে।’ আই লিগ–আইএসএল মিশবে কিনা টানাপোড়েন অব্যাহত। ফাইনালের আগে শিলটন পালদের হেডস্যরকে যা একটু ভাবাচ্ছে। কিন্তু মুখে বলছেন অন্য কথা, গোয়েন্দা নই। তবে ছেলেদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পড়ার চেষ্টা করি। মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গল কী করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। প্লেয়াররা পেশাদার। আশা করি, ফাইনালের আগে ওদের মাথায় ওসব কিছু নেই। রবিবারের পর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওরা নেবে।’
বোঝাই যাচ্ছে, বাগান শিবিরে অদৃশ্য প্ল্যাকার্ড ঝোলানো। যাতে লেখা, ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার।’
ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল। হোটেলের সুইমিং পুলে সনি, কাৎসুমি, বলবন্ত, জেজে, ডাফিরা। ছবি: রনি রায়
No comments:
Post a Comment